ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

গোলকধাঁধায় বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক :::bnp

গোলকধাঁধায় পড়েছে বিএনপি। নির্বাচন, সাংগঠনিক কার্যক্রম, মামলা-হামলার খড়গ, দলীয় কোন্দল মেটানো সব মিলে যেন এক টালমাটাল অবস্থায় দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি।

কোনটা রেখে কোনটা করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না তারা। নেতারা একেকজন একেক দিকে যাচ্ছেন। দলের গুলশান কার্যালয়ের সমন্বয়হীনতা আরও উসকে দিচ্ছে দলের এ হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এমন অবস্থায় সারা দেশের নেতা-কর্মীরা দিন দিন হতাশায় ডুবছেন। অন্যদিকে চারপাশ ঘিরে রাখা লোকজন বিএনপি চেয়ারপারসনকে ভুল তথ্যের মাধ্যমে সারাক্ষণ আশার আলো দেখালেও কার্যত হচ্ছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। দলের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পাঁচ শতাধিক লোকের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আর শতাধিক উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও পুলিশের অনুমতি ছাড়া রাজধানীর কোথাও ছোটখাটো একটি সমাবেশ পর্যন্ত এখন আর করা সম্ভব হয় না। এমনকি জেলা পর্যায়েও সম্মেলন বা সভা-সমাবেশের অনুমতি মিলছে না সহসাই। এসব কারণে আরও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন পদ-পদবিবঞ্চিত মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা। জানা গেছে, সরাসরি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এলেও এখন পর্যন্ত নিজেদের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার কী ধরনের হবে, তার কোনো নতুন ফর্মুলা নির্ধারণ করতে পারেনি বিএনপি। তবে দেরিতে হলেও এ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত যে রূপরেখা দেবেন, এতে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকেই তৈরি করা হচ্ছে বিএনপির এই সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব। এজন্য মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির ছয় সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দেশের খ্যাতনামা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।এ প্রসঙ্গে ২০-দলীয় জোটের শরিক ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে ঠিক করতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন; তারপর ইসি গঠন। নইলে যত ভালো মানুষ দিয়ে কিংবা শক্তিশালী ইসিই গঠন করা হোক না কেন, কোনো ফায়দা হবে না। কারণ সেই ইসি পরিচালিত হবে নির্বাচনকালীন সরকারের নির্দেশনায়ই। আজহারুল ইসলাম তার দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের নাম প্রস্তাব করেছেন ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’।

নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হতে পারে— এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্যও বিএনপির পক্ষ থেকে একটি রূপরেখা দেবেন। এতে নির্বাচনকালীন সহায়ক নিরপেক্ষ একটি সরকার গঠনের ফর্মুলা দেওয়া হবে। এ নিয়ে কার্যক্রম চলছে। সরকার তা মানলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে। অন্যথায় সেই চিরচেনা আন্দোলনের পথই আমাদের ধরতে হবে। ’

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাউস আকৃতির নির্বাহী কমিটি গঠনের পর জেলা কমিটিগুলোর গঠন নিয়ে রীতিমতো বিপাকে বিএনপি। বিশেষ করে গত ১৯ মার্চের জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে সংশোধিত ‘এক নেতার এক পদ নীতি’ বাস্তবায়নে শুরুতেই হোঁচট খায় দলটি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ও বিব্রত হয়েছেন জেলা কমিটি গঠনে জড়িত কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মধ্যে মাত্র দুটি জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়েছে। তার মধ্যেই সভাপতি ও সম্পাদক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির দুজন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে। জেলা দুটি হলো কিশোরগঞ্জ ও জামালপুর। এ ছাড়া অসংখ্য ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে গুলশান কার্যালয়ের দু-এক জন কর্মকর্তার শ্যেন দৃষ্টির কারণে বঞ্চিত হতে হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের ত্যাগী নেতারা দল ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। ফলে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অথবা চেয়ারপারসন আহূত কোনো কর্মসূচিতেও এখন আর আগের মতো নেতা-কর্মীরা আসেন না। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘বিএনপিতে এখন সাহসী ও যোগ্য নেতার খুবই অভাব। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ডাকেও এখন আর কোনো কর্মী মাঠে নামেন না। অথচ অমুক ভাইয়ের, তমুক ভাইয়ের নামে মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে তারা মাঠে নামেন। ’ তার এ বক্তব্য পত্রপত্রিকাসহ নানা গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। তবে গুলশান কার্যালয়ের কার্যক্রমের এই সমন্বয়হীনতা, বিশেষ করে যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিংবা যার জন্য যে দায়িত্ব নির্ধারণ করা আছে, তা পালন না করে সবাই একসঙ্গে রাজনৈতিক (দলের) নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন শুরু করায় সেখানেও বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিপাকে খালেদা জিয়া। প্রথমে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে চাইলেও তৈমূর নিজের অনাগ্রহ প্রকাশ করে নির্বাচনে না গিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নামের যাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের আর মাত্র দেড় সপ্তাহ বাকি থাকলেও শহরব্যাপী নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই তার পরিচয়পর্ব এখনো শেষ হয়নি। তবে গতকাল থেকে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের তার পক্ষে মাঠে নামতে দেখা গেছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে বিএনপি প্রার্থীই জয়ী হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার খড়গ ও সাজা আতঙ্কে ভুগছেন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দলের শীর্ষনেতা বেগম জিয়াকেই সপ্তাহান্তে যেভাবে ঘন ঘন আদালতে যেতে হচ্ছে, এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা রীতিমতো শঙ্কিত। তা ছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। সামনে আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়। তা ছাড়া ছয় বছরের শাস্তির আদেশ মাথায় নিয়ে বিদেশে মারা গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। দলের শীর্ষনেতা ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলার এ অবস্থা দেখে তৃণমূল আরও বেশি শঙ্কিত। এদিকে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো পদ-বাণিজ্যের ফলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বঞ্চনা আরও কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ::

পাঠকের মতামত: