অনলাইন ডেস্ক :: এমপিত্ব না থাকলেও পিতা দাবি করে ইসহাক নামে এক যুবক আদালতে অভিযোগ করার পর দেশব্যাপী আবারো আলোচিত হয়ে উঠেছেন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিতর্কিত সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে মামলায় করা অভিযোগে তার সেই আজানা কাহিনী।
এদিকে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ইসহাক গর্ভে আসার খবর জেনে গোপনে বিয়ে করা স্ত্রীকে এলাকার এক রাজমিস্ত্রীর (নির্মাণ শ্রমিক) সাথে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন বদি, এমনটি অভিযোগ করেছেন মামলার বাদি ইসহাকের মা ও বদির প্রথম স্ত্রী দাবিদার সুফিয়া খাতুন।
সুফিয়ার দাবি, তিনিই সাবেক এমপি বদির প্রথম স্ত্রী। ১৯৯২ সালে ৫ এপ্রিল নিরাপত্তার কারণে বদিদের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় গোপনে তাকে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। পরে বিষয়টি স্বজনদের মাঝে জানাজানি হলে গর্ভের সন্তানসহ স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিক নুরুল ইসলামের সাথে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়।
তাদের (বদির) বিয়ের বিষয়ে মুখ খুললে সন্তানসহ সুফিয়াকে হত্যার হুমকি দেন স্বামী বদি ও তার শ্বশুর এজহার মিয়া ওরফে এজহার কোম্পানি।
গত ১৩ ডিসেম্বর বদিকে পিতা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন ইসহাক (২৬)। পাশাপাশি পিতৃপরিচয় নির্ধারণে ডিএনএ টেস্ট করার আবেদনও করেন তিনি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বদির বিরুদ্ধে সমনজারি করে।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পুরো কক্সবাজারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
টেকনাফের স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে তৎকালীন টেকনাফ ইউনিয়নের অলিয়াবাদে বসবাসরত সুফিয়াদের বাড়িতে বেশ কয়েকবার ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইসময় সুফিয়ার পিতা ছিলেন সৌদি আরবে। পুরুষশূন্য বাড়িতে মায়ের সাথে থাকতেন যুবতী সুফিয়া। বেপরোয়া ডাকাতির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন তারা।
বিষয়টি ওই সময় তৎকালীন টেকনাফ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজহার মিয়াকে (সাবেক সাংসদ বদির বাবা) জানালে তিনি তার বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার আশ্বাসে সুফিয়াদের ঘরবাড়ি বিক্রি করে দিতে নির্দেশ দেন। সফিয়াদের পরিবারও চেয়ারম্যানের কথামতো বাড়িঘর বিক্রি করে দেন।
পরে বদিদের বাড়িতে বিচারকার্যক্রম চলতো এমন একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে সুফিয়াদের আশ্রয় দেন বদির পিতা এজহার মিয়া।
সুফিয়া জানান, সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিদের কাছে আশ্রয়ে থাকার সুবাদে বদির সাথে তার প্রতিদিন দেখা হতো, কথা হতো। একপর্যায়ে বদি একদিন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি হয়ে যান।
পরে ১৯৯২ সালে ৫ এপ্রিল ইসলামিক রীতিনীতি অনুসারে বদির সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ে পড়ান আবদুর রহমান বদিদের পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে তৎসময়ে কর্মরত মৌলভী আবদুস সালাম। বিয়ের সাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ।
কিন্তু বিয়ের কয়েকমাস পর বিয়ের বিষয়টি জেনে যান বদির পিতা এজহার মিয়া (এজাহার কোম্পানি)। তখন তার গর্ভে আসে ইসহাক।
তিনি আরও জানান, ওইসময় প্রথমে গর্ভপাতের চেষ্টা করেন বদি। তাতে তিনি রাজি না হলে গর্ভের সন্তানসহ হত্যার হুমকি দিয়ে এলাকার একজন রাজমিস্ত্রীর সাথে তার বিয়ে দেন সাবেক স্বামী আবদুর রহমান বদি ও বদির পিতা এজহার কোম্পানি।
তবে তখনো এসবের (বদির সাথে বিয়ে ও গর্ভবতী হওয়ার বিষয়ে) কিছুই জানতেন না বদির পিতার কথায় সুফিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হওয়া সহজ সরল রাজমিস্ত্রী নুরুল ইসলাম।
সুফিয়ার বর্তমান স্বামী নুরুল ইসলামের দাবি সাবেক এমপি বদি তার সাথে প্রতারণা করেছেন। তিনি বলেন, বদির পিতা এজহার মিয়া একদিন তাকে ডেকে বললেন, তোর জন্য একটা মেয়ে ঠিক করেছি। ওনাকে (চেয়ারম্যানকে) অভিভাবক হিসেবে গণ্য করতাম বলে আমিও আর না করিনি। এসময় বদিও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও সুফিয়াকে বিয়ে করতে তাকে অনুরোধ করেন এবং সবসময় পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন।
তবে বিয়ের দুইমাস পর জানতে পারি স্ত্রী সুফিয়া গর্ভবতী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুফিয়া আমাকে সব খুলে বলেন। পরে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সুফিয়া।
নুরুল ইসলাম বলেন, এমন একটা বাস্তবতা সামনে আসবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। এই বাস্তবতা লুকিয়ে রাখতে বদির হুমকিতে কখনো কক্সবাজারে কখনো চট্টগ্রামে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
সুফিয়া ও নুরুল ইসলাম দুজনই ইসহাকের পিতৃপরিচয় চান।
সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে প্রতারক উল্লেখ করে তারা বলেন, আমাদের কোন দাবি-দাওয়া নেই। শুধু চাই তাদের সন্তান ইসহাক তার পিতার স্বীকৃতি পাক। ইসহাককে ছেলে হিসেবে মেনে নিতে সাবেক স্বামী বদির প্রতি অনুরোধও জানান সুফিয়া।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে আবদুর রহমান বদির মুঠোফোনে একাধিক বার কল দেয়া হয়। রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলে তাতেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে, আদালতে মামলাটি ওঠার পর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি লিংকে গিয়ে আবদুর রহমান বদি লিখেন- উখিয়া-টেকনাফের যেসব ছেলে-মেয়ে তাকে পিতা দাবি করে আদালতে দাঁড়াবে তাদের সবাইকে নিজের সন্তান বলে মেনে নেবেন তিনি (বদি)। এটি কোন অর্থে বলেছেন তার সঠিকটা জানা যায়নি।
পাঠকের মতামত: