ঢাকা,মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

খাদ্য সংকটে বনের হিংস্র হাতি এখন লোকালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে খাবার, চারণভূমি ও করিডোর ধ্বংস হওয়ায় প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতির পাল। হাতির ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে বন এলাকার পাশে বসবাসরত জনগোষ্ঠী। বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতেও নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা।

চকরিয়ায় সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, বরইতলী ও হারবাং এলাকার লোকজন আতঙ্কে বসবাস করছেন। আতঙ্কে রয়েছেন চট্টগ্রাম বনাঞ্চলের আশপাশের লোকজনও। লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতি তাড়াতে তৎপর বনকর্মীরা। তার পরও হানা দিচ্ছে হাতির পাল। যে কারণে বিদ্যুতের তার দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখছেন লোকজন। বৈদ্যুতিক ফাঁদে পা দিয়ে লামার কুমারী এলাকায় একটি হাতি মারা গেছে।
পরিবেশবাদীদের অভিমত,  খাবারের খোঁজে আগে আমন ও বোরো মৌসুমে ধানক্ষেতে নামতে পারত হাতির পাল। কিন্তু তামাকের আগ্রাসনে কমে গেছে ধান চাষ। এসব কারণে লোকালয়ে আসছে হাতি।
এদিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের যত্রতত্র বৈদ্যুতিক ফাঁদ পাতার কারণে হাতির অবাধ বিচরণ, প্রজনন ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নির্ধারিত করিডোর দিয়ে হাতির পাল চলাচল করে থাকে। বেশির ভাগ করিডোরে স্থাপনা গড়ে তোলায় আগের মতো চলাচল করতে পারছে না হাতির পাল।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানান, কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ বন বিভাগের ১২টি করিডোর থাকলেও বর্তমানে বেশির ভাগ হাতি চলাচলের অনুপযোগী। তাঁর ভাষ্য, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে উখিয়া-ঘুমধুম, তুলাবাগান, টেনারছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, রাজারকুল ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের তুলাতলি, ঈদগড়, ভূমুরিয়াঘোনা রাজঘাট, খুটাখালী মেধা-কচ্ছপিয়া, ছাইরাখালী, মানিকপুর করিডোরের বেশির ভাগ অংশ দখল হয়ে গেছে। এসব জায়গায় জনবসতি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা গড়ে তোলায় হাতির চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। খুটাখালী ও মেধাকচ্ছপিয়ার ওপর দিয়ে নির্মিত রেললাইনে হাতি পারাপারের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণের কথা থাকলেও সেখানে কোনো আন্ডারপাস করা হয়নি। ফলে হাতি পারাপারে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন বিভাগের চুনতি, সাতগড়, বদ্দোয়ারা, শুকছড়ি, কোদালা, লারিশ্যা কোদালা করিডোরেরও চিত্রও একই রকম। চুনতি অভয়ারণ্যের রেললাইনে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হলেও তা দিয়ে হাতি চলাচল করতে পারছে না। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে।

ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, সিএমসির সহযোগিতায় বনের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীন পাঁচটি বন বিটের যেসব স্থানে বন্যহাতির আবাসস্থল ছিল, সেখানে কলাগাছ ও ঘাস রোপণের মাধ্যমে খাদ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। বন বিভাগের টহল দলের তৎপরতা অব্যাহত আছে। অনেক স্থান থেকে হাতি মারার ফাঁদ জব্দ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: