নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :: পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউপির ঝুমপাড়া এলাকার মৃত নুরুল কাদেরের ছেলে আবদুল হামিদ। হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ চেষ্টা ও বন মামলাসহ ডজনের অধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকটি মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাহাড় বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন অপরাধ কর্ম পরিচালিত করলেও ধরাচোয়ার বাইরে থেকে যায় এ স্বীকৃত অপরাধী।
টৈটংয়ের বটতলি, ঝুম পাড়া, মালঘারার অসহায় লোকজন তার অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ওঠলেও ভয়ে মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পায়না। স্বশস্ত্র অবস্থায় সব সময় চলাফেরা করায় সচেতন মহলও নিরবে সহ্য করে যায় তার নির্মম অত্যাচার আর নির্যাতন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবদুল হামিদের নেতৃত্বে শতাধিক লোক নিয়ে গড়ে ওঠেছে হামিদ বাহিনী। তার বাহিনীর সাথে জড়িত রয়েছে টৈটংয়ের সীমান্ত বাঁশখালী উপজেলা পুঁইছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা বহু মামলার আসামী ডাকাত পুইন্যাসহ আরো বেশ কয়েকজন স্বীকৃত অপরাধী। রহিম ও গফুর নামে তার অপর দুইভাইও এ বাহিনীর সদস্য। তাদের কাছ হল পাহাড়ে বসবাসকারী নিরহ লোকদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, টাকা না দিলে ধর্ষণ চেষ্টা ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা।
এ সমস্ত অপরাধ কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত ঘটালেও তাদের ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারেনা ভুক্তভোগীরা। যার কারণে বেপরোয়া হয়ে অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালিত করতে কোন ধরণের বাধার মধ্যে পড়তে হয়না। এছাড়াও অন্যের জমি জবর দখল করে মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কেটে নিধন করার মত অহরহ অভিযোগ রয়েছে তার ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।
আরো জানা গেছে, টৈটংয়ের বটতলি এলাকার উকিল আহমদকে হত্যা করার পর বেশ কিছুদিন অপরাধ কর্ম থেকে দূরে ছিলেন আবদুল হামিদ। এক সময় ছোট ছোট অপরাধ করতে করতে যোগ দেন বনের রাজা খ্যাত বারবাকিয়ার জাহাঙ্গীর গ্রুপে। তার গ্রুপে যোগ দিয়ে শুরু করেন অপহরণ ও ধর্ষণ চেষ্টার মত ঘটনা। ওই সময় তার সাথে যোগ দেন ঝুম পাড়ার মোঃ জাবেদ, আনছার ও মালঘারার এনাম।
বারবাকিয়া-টৈটংয়ের কিছু অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীর ও টৈটংয়ের পাহাড়ে হামিদ অপরাধ কর্মে নেতৃত্ব দেয়ায় পুরো পাহাড়ে অধিবাসীরা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এছাড়াও পুঁইছড়ির পুইন্যা ডাকাত তাদের সাথে যোগ দেয়ায় শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ পর্যায়ে কিশোরী সালমা, নেজামকে হত্যা ও ছাত্র আনছারকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় র্যাব প্রশাসন তৎপর হওয়ার পর সদ্য চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন বনের রাজা জাহাঙ্গীর। যার কারণে জাহাঙ্গীর গ্রুপের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যোগ দেন টৈটংয়ের হামিদ গ্রুপে।
খাঁচায় বন্দি বনের রাজা এ সুযোগে হামিদ তার বাহিনীকে অধিক সংগঠিত করে বারবাকিয়া ও টৈটং ইউনিয়নের পুরো পাহাড়ের নেতৃত্ব নিয়ে নেয়। শুরু করেন নানা অপরাধ কর্ম। কেউ তার অপরাধ কর্মের প্রতিবাদ করলে তাদেরকে প্রাণে হত্যা করবে মর্মে হুমকিও প্রদান করেন। ইতোমধ্যে পেকুয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতারে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করলেও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে যতে সক্ষম হয়। এমনকি স্থানীয়রা সংবাদকর্মীরা পাহাড়ের যেকোন বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গেলে তাদের উপর হামলারও চেষ্টা করে হামিদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবদুল হামিদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা খুব ভয়ংকর। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে টাকা দিতে হয়। না দিলে মারধর করে আহত করে। কিছুদিন পরপর পাহাড়ে এসে বসতভিটা থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে থাকেন। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির আত্মীয় হওয়ার সুযোগে তার এ বেপরোয়া আচরণে অসহায় অবস্থান জীবন যাপন করতে হয়। প্রশাসনের প্রতি স্থানীয়দের দাবী তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হউক।
পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) কানন সরকার বলেন, ‘তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।’
পাঠকের মতামত: