জাকের উল্লাহ চকোরী ::::
কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন, দু’ হেভিওয়েট প্রার্থী। একজন বর্তমান জেলা পরিষেদর প্রশাসক সাবেক এমপি মোস্তাক আহমদ চৌধূরী। তিনি ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় ভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন। অপর প্রার্থী হচ্ছেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক জেলা চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার -১ আসন থেকে দুইবার নির্বাচিত এমপি ও বর্তমান জাতীয়পাটি (জেপি মঞ্জু’র) প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনসহ সদস্য পদে লড়ছেন ৮১ প্রার্থী। বর্তমানে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সর্ব দক্ষিণ প্রান্তের জেলা পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে ৮ উপজেলায় নির্বাচনী’র প্রচার-প্রচারনার ঝড় উঠেছে।
কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলায় ৪টি পৌরসভা ও ৭২টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলার, কাউন্সিলার, ইউপি চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার, ও পুরুষ সদস্যসহ মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১০০৪ জন। জেলা পরিষদের সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ১৫টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা হচ্ছে ৫টি। এসব আসনে এক চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ৫ মহিলা সদস্যা ও ১৫ পুরুষ সদস্য নির্বাচিত করবেন ১ হাজার ৪জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা বিরামহীন ভাবে ভোট প্রার্থানার জন্য ঘুরছেন নির্বাচিত জনপ্রাতিনিধিদের ঘরে ঘরে। এ সুযোগে নির্বাচিত জনপ্রাতিনিধিদের কদরও বেড়েছে প্রার্থীদের কাছে।
এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোন প্রার্থী না দেয়ায় সাবেক জেলা চেয়ারম্যান এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও আঞ্চলিকতার কথা বেশী উচ্চারিত হচ্ছে ভোটারদের মাঝে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক সীমানা নির্ধারণ করেছেন জেলা প্রশাসন। সাধারণ ওয়ার্ড ১ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন।
সাধারণ ওয়ার্ড ২ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া, ধলঘাটা, শাপলাপুর ও হোয়ানক ইউনিয়ন।
৩ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে, মহেশখালী পৌরসভা, ছোট মহেশখালী, বড়মহেশখালী ও কুতুবজুম ইউনিয়ন। এই ৩টি ওয়ার্ড নিয়েই গঠিত হয়েছে সংরক্ষিত ওয়ার্ড মহিলা আসন-১।
সাধারণ ওয়ার্ড ৪ নং গঠিত হয়েছে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া, পেকুয়া সদর, রাজাখালী ও টৈইটং ইউনিয়ন।
৫ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া, শীলখালী, চকরিয়ার হারবাং, বরইতলী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন।
৬ নং ওয়ার্ডে চকরিয়ার কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা, মানিকপুর ও পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়ন। এই ৩টি ওর্য়াড় নিয়ে গঠিত হয়েছে সংরক্ষিত মহিলা আসন-২।
৭ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে চকরিয়া পৌরসভা, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন, কাকরা, সুরজপুর মানিকপুর ও বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন।
৮ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন, শাহারবিল, চিরিঙ্গা, ফাসিয়াখালী ও খুটাখালী ইউনিয়ন।
৯ নং ওয়ার্ডে কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলাম পুর, পোকখালী, ইসলামাবাদ, ঈদগাও ও জালালাবাদ ইউনিয়ন। এই ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩।
১০ নং ওয়ার্ডে কক্সবাজার সদর উপজেলার কক্সবাজার পৌরসভা, খুরুস্কুল, ঝিলংজা ও পিএমখালী ইউনিয়ন।
১১ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী, রামু উপজেলার রশিদ নগর, জোয়ারিয়া নালা ও চাকমারকুল ইউনিয়ন।
১২ নং ওয়ার্ডে রামু উপজেলার ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন। এই ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হচ্ছে মহিলা আসন-৪।
১৩ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে রামু উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়ন, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও খুনিয়া পালং ইউনিয়ন।
১৪ নং ওয়ার্ড এর অর্ন্তভুক্ত হয়েছে উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন।
১৫ নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন। এই ৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে সংরক্ষিত মহিলা আসন-৫।
জেলা পরিষদ বর্তমান আইন অনুযায়ী প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ড থেকে একজন করে সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে একজন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। এতে ভোটাধীকার পাবেন উপজেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্য, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার বৃন্দ।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সবকিছু ঠিকটাক থাকলে আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্টিত হবে কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর বিপরীতে (জেপি’র মঞ্জু) প্রেসিডিয়েম সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। কক্সবাজার অঞ্চলের জনপ্রিয় নেতা সালাহ উদ্দিন মাহমুদ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন ১৯৭০ সালে সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। রাজনীতিতে প্রবীণ এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন বিষয়টি এখন জেলার রাজনীতি অঙ্গনে সরব আলোচনা চলছে। সাধারণ ভোটাররা (তৃনমুলের জনপ্রতিনিধি) মনে করেন, নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তি ইমেজে দুই প্রার্থীই সমান যোগ্যতার অধিকারী। তৃনমুলে রয়েছে দুইজনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার শেষ দিকে দেশের অন্যসব জেলার সাথে কক্সবাজার জেলা পরিষদে প্রশাসক পদে নিযুক্ত হন নির্লোভ রাজনীতিবিদ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের জমিদার বাড়ির সন্তান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। সেই থেকে চলতি ২০১৬ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ একজন বরণ্য রাজনীতিবিদ তেমনি সুবক্তাও বটে। এ কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর তাকে সরকারিভাবে স্কলারশীপ দিয়ে বুলগেরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলার (চকরিয়া-পেকুয়া) প্রথম নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান।
চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ওইসময় কারাভোগও করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও কক্সবাজার মহকুমা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে বুলগেরিয়া সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে সুফিয়া সোস্যাল সায়েন্স ও পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন একাডেমী থেকে প্রশাসনের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৮৫ সালে চকরিয়া উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রথম জেলা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
জানা গেছে, সালাহউদ্দিন মাহমুদের আমলে অভুতপুর্ব উন্নয়ন ও প্রতিষ্টা হয়েছে চকরিয়া নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, চকরিয়া কলেজকে ডিগ্রি কলেজে উন্নীতকরণ, বাটাখালী সেতু নির্মাণ, পেকুয়া কাটাফাড়ি সেতু নির্মাণ, বাগগুজরা সালাহ উদ্দিন ব্রীজসহ বরইতলী মগনামা সড়ক, বদরখালী সড়কের উন্নয়ন, চিংড়ি জমির সঠিক বরাদ্দের মাধ্যমে চাষের উন্নয়ন, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের উন্নয়নসহ গ্রামীণ সড়ক, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেন। কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে তার আমলে জেলার আট উপজেলার প্রত্যান্ত জনপদে দৃশ্যমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। যা এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে প্রতিয়মান হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: