এম. এ মান্নান, কুতুবদিয়া ::প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত এ জনপদের পুরোটাই যেন পর্যটনের বিশাল ক্ষেত্র। দেশের পর্যটন শিল্পের অফুরন্ত সম্ভার এ দ্বীপের পশ্চিম উপকুলে রয়েছে প্রায় ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দৃষ্টি নন্দন সমুদ্র্র সৈকত। কুতুব শরীফ দরবার, বিভিন্ন স্থানে সুদীর্ঘ লবণের মাঠ, গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে এনে শুঁটকি তৈরী করার শুঁটকিমহাল, পশ্চিমে সৈকত জুড়ে দৃষ্টি নন্দন ঝাউ বাগান, দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প, রাতের অন্ধকারে জাহাজকে পথ দেখানো নতুন বাতিঘর,নির্মানাধীন লাইটহাউস নৌ রেডিও ষ্টেশন সহ সব কিছুই যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সাগর কন্যা কুতুবদিয়া।
সাবেক উপজেলা নির্বাহি অফিসার সুজন চৌধুরী পর্যটন বিকাশে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়ায় আশার আলো দেখে দ্বীপ বাসি। ইতিমধ্যে সমুদ্র সৈকতে মাটি ভরাট,শহীদ মিনার পার্ক,সিটিজেন পার্ক, ফুলের নার্সারী, পার্ক, যোগাযোগ সুবিধা সহ দর্শনীয় ইত্যাদির কাজ প্রায় শেষ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বঞ্চিত হবে না অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ থেকে। যুগ যুগ ধরে পর্যটন আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্র হিসেবে অপার সম্ভাবনার আলো দেখে দ্বীপের মানুষ।
সড়কপথে পেকুয়ার মগনামা ঘাট থেকে বড়ঘোপ জেটি ঘাট ডেনিস বোটে ৩ কিলোমিটার চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যায এখানে। সাধারণ বোটে ২০-৩০ মিনিট, সার্বোক্ষণিক স্পীড বোটে ৫-৭ মিনিট সময় লাগে পারাপারে। শতাব্দীকাল (১৯১৭ সালে) পূর্বে বড়ঘোপ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয় কুতুবদিয়া থানা এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয় । গত বছর ৩০ ডিসেম্বর কুতুবদিয়া থানার শতবর্ষ উদ্যাপন হয় জাঁকজমক ভাবে।
রাত্রি যাপনে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, উন্নত মানের হোটেল সমুদ্র বিলাস।খাবারে রয়েছে বেলা ভ’মি রেস্তোরা। যেখানে বাংলা,চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান খাবার পরিবেশন হয়। পর্যটকদের উপহার হিসেবে মিষ্টির জগতে দেশসেরা ঐতিহ্যবাহি টাঙ্গাইলের চমচম, রসমালাই তৈরি হচ্ছে টাঙ্গাইল সুইট্স এ । উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক শাহ আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল-কুতুবী (রহ.) এর জন্মও এই দ্বীপে। তাঁর ঐতিহাসিক কুতুব শরীফ দরবার ছাড়াও এখানে আরো রয়েছে কুতুব আউলিয়ার মাজার, ঐতিহাসিক কালারমার মসজিদ।
মালেক শাহের ওফাত উপলক্ষে প্রতিবছর ১৯ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। বার্ষিক ফাতিহায় কয়েক লাখ মানুষ কুতুব শরিফ দরবারে সমবেত হন। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে সরকারের সুনজর অনেকটাই পড়েছে এখন। সারা বছরই কুতুবদিয়ায় পর্যটক যেমন বাড়তে শুরু করেছে, তেমনি এখানকার মানুষ ও সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। দ্বীপ রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ,সংস্কারের কাজ অনেকটাই এগিয়ে।এটি লবণ ও শুঁটকি মাছের অন্যতম ক্ষেত্র। বিষ,লবন ছাড়া সব প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে মহালগুলোতে। দ্বীপের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ চলছে বিদ্যুৎ ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ, যা দ্বীপের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন ও ব্যবসা নিশ্চিত হবে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে পর্যটন ও ব্যবসায়ের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে ওঠবে এ দ্বীপ।
এ সম্পর্কে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জিয়াউল হক মীর চকরিয়া নিউজকে বলেন, দ্বীপের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন বিকাশে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি বিশেষ বরাদ্ধ ছাড়াও বেসরকারি ব্যক্তি বিশেষকে যুক্ত করা হচ্ছে পর্যটন বিকাশে। স্পটগুলো রক্ষার্থে ও নতুন স্পট তৈরিতে যথাযোগ্য উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে গত পর্যটন মওসুমে পর্যটকরা এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এটি পর্যটন ক্ষেত্র এবং দেশের কাংক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
পাঠকের মতামত: