বিশেষ প্রতিবেদক ::
নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও জালিয়তি করে প্রতারণার মাধ্যমে কাবিননামা সম্পাদন করে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করার অভিযোগে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে কুতুবদিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামী আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকী কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার মৌলভী আজিজুল হক ছিদ্দিকীর ছেলে।
কুতুবদিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাঈদীন নাঁহী’র নির্দেশে কুতুবদিয়া থানার এসআই জিয়া উদ্দিন বাদী হয়ে গত ১ মে মামলাটি দায়ের করেন বলে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী জানান।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, কুতুবদিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গত ১৭ এপ্রিল একটি মামলায় (সিআর নং-৭২/২০২২) জামিন আবেদন শুনানীকালে আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকী নিকাহ রেজিস্ট্রার না হয়েও কাজী সেজে রায়হান শরীফ নামে একজনকে জোর করে বিয়ে করান বলে আদালতে জানানো হয়। বিষয়টি বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ সাঈদীন নাঁহী’র আদালতে আমলে আনা হয়। অথচ ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর আইন ও বিচার বিভাগের শাখা-৭ এর বিচার-৭/২এন-১/২০১০-৮১৩ নম্বর স্মারকে অবৈধভাবে বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং এবং আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার সংক্রান্ত লাইসেন্স বাতিল করে ইউনিয়ন ৩টিতে নিকাহ রেজিস্ট্রার এর পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত পত্রে নিকাহ রেজিস্ট্রার সংক্রান্ত বালাম ও যাবতীয় কাগজপত্র আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকীর কাছ থেকে জব্দ করতে এবং পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রারকে উল্লেখিত ইউনিয়ন সমুহের নিকাহ রেজিস্ট্রার এর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। একইভাবে কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রারও বালাম ও যাবতীয় কাগজপত্র আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকীর কাছ থেকে জব্দ করতে নির্দেশ দেন।গত ২০ এপ্রিল উক্ত প্রতারক ও অবৈধ নিকাহ রেজিস্ট্রার আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকীকে তার বালাম সহ আদালতে তলব করেন।
অবৈধ নিকাহ রেজিস্ট্রার গত ২০ এপ্রিল কুতুবদিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হলে সেখানে তার বালাম ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও প্রতারণা করে কাবিননামা সম্পাদন ও নিকাহ রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। তখন বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ সাঈদীন নাঁহী প্রতারক আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকীকে এ বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়। প্রতারক কাজী আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন। আদালত সময় মঞ্জুর করে ২৭ এপ্রিল প্রতারক কাজীকে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতারক শোয়াইব ছিদ্দিকী ওই দিন (২৭ এপ্রিল) আদালতে হাজির হননি।
পরে আদালত একইদিন তাঁর আদেশে বলেন, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি, আইনের সুস্পষ্ট লঙ্গন। এটা শুধু প্রতারণা নয়, দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। এ ধরনের প্রতারকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে, অপরাধীরা অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে, এতে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় উক্ত প্রতারকের বিরুদ্ধে কুতুবদিয়া থানার একজন পুলিশ সদস্যকে বাদী হয়ে আদেশ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশের কপি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা পরিদর্শক, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কক্সবাজারের জেলা রেজিস্ট্রার ও কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর কাছে প্রেরণ করা হয়।
কুতুবদিয়া থানার ওসি আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর এসআই জিয়া উদ্দিনকে বাদী করে গত ১মে প্রতারক আবুল আনছার মোহাম্মদ শোয়াইব ছিদ্দিকীকে আসামী করে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৬/৪৬৮/১৭০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার থানা মামলা নম্বর : ০১/২০২২ ও জিআর মামলা নম্বর : ৩৮/২০২২ (কুতুবদিয়া)। এতে আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই বিষয়ে কুতুবদিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার জানান, মামলার কপি কুতুবদিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাঈদীন নাঁহী’র কাছে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য এসআই আমিন কাদের খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসামীকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যহত রয়েছে।
পাঠকের মতামত: