কুতুবদিয়া প্রতিনিধি :: সবেমাত্র চলতি বছর কুতুবদিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে কুতুবদিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিল মেধাবী ছাত্রী আফসানা আলম সোনিয়া। বিদ্যালয়ে যে কোন সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছিল তার। গতবছর (২০১৯) জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জেলা পর্যায়ে সেরা গার্লস গাইড পুরস্কার লাভ করেছে। মা-বাবা এক ভাই দুই বোন মিলে বড়ঘোপে নানার খালি বাড়িতে বসবাস ছিল দীর্ঘদিন ধরে।
উত্তর ধুরুং আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়ার নানা দলিল লেখক গিয়াস উদ্দিন মারা গেছেন ৩২ দিন আগে স্ট্রোকে। বড় মামা চট্টগ্রামে কাস্টমস এর সিপাই আমিনুল কবীর বিয়ে করেছেন দেড় বছর আগে। স্ত্রী ৮ মাসের সন্তান সম্ভাবা। স্ত্রীকে রেখে বাবার কুলখানিতে আসেন। সোনিয়া সোমবার দুপুরে মামার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য মামা আমিনুল কবীর, বাবা মো: আক্কাছ মগনামা থেকে একটি সিএনজিতে ওঠে চকরিয়ার উদ্দেশ্যে। সাথে কুতুবদিয়া উপজেলা গেটে ডিজিটাল সেন্টারের দিদারুল ইসলাম ও একটি কেজি স্কুলের শিক্ষক নেজাম উদ্দিনও যাত্রী হয়েছিল।
পেকুয়া মেহের নামা নন্দী পাড়ার পাশে অপর একটি সিএনজিকে ওভারটেক করতে গিয়েই নাকি রাক্ষুসী ট্রাকের মুখে পড়ে সিএনজিটি। মুহুর্তেই ঘটনাস্থলেই মারা যান মামা আমিনুল কবীর ও সিএনজি চালক। আহত বাবা আক্কাছ মারা যান কতক্ষণ পরেই। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপতালে।
দুমড়ে মুচরে যাওয়া সিএনজি থেকে আটকে পড়া সোনিয়াকে বের করার ভিডিও দৃশ্য কাঁদিয়েছে সোস্যাল মিডিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষকে। মুখে, মাথায়, দুই পায়ে মারাত্বক জখমে রক্তপাত ছিল প্রচুর। দু‘একটা কথা বলতে গিয়েও ভোলেনি বাবাকে। বাবা কোথায় জানতেও চেয়েছিল সোনিয়া। কিন্তু পারা গেলোনা ওকে বাঁচাতে। লক্ষ মানুষের দোয়াও যেন বিফলে গেল। লেখা ছিল যা তাই হলো। মঙ্গলবার মধ্য রাত দেড়টার দিকে সদা হাস্যোজ্জল কিশোরী মেধাবী ছাত্রীটি চলে গেল ওপারে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বাবা আক্কাছ, মামা আমিনুল ও সোনিয়ার জানাযা অনুষ্ঠিত হয় একসাথে। দ্বীপের প্রায় সহস্রাধিক শোকাহত মানুষ অংশ নেয় জানাযায়।
কেঁদেছে অনেকেই। কুতুবদিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিগারুন নাহার বলেন, সোনিয়া ছিল তাদের বিদ্যালয়ের গর্ব। সব অনুষ্ঠানেই তাকে পারফর্ম করতে হতো। পরিশ্রম করে সুনাম এনে দিয়েছে ক্ষণজন্মা এই মেধাবী মেয়েটি। সবাইকে কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাবে তারা ভাবতেই পারেননি। সোনিয়াকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন এ দোয়াই চাইলেন তিনি।
পাঠকের মতামত: