ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

কুতুবদিয়াবাসী এক যুগেও বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প থেকে আলোর মুখ দেখেনি

কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবোর ) নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপিত কুতুবদিয়া দ্বীপের উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি এক যুগেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে আলোর মুখ দেখেনি। এ প্রকল্পটি রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে বেড়িবাঁধ মির্মাণ করেছে। অবশ্য এ বায়ুবিদ্যুৎ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় এখনো অরক্ষিত।
বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালের জুলাই মাসের দিকে কুতুবদিয়া দ্বীপের আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবলরচর গ্রামে স্থাপিত বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি এক যুগ পূর্বে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব (বিউবোর)  অর্থায়নে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবোর) তত্বাবধানে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়ার সাগর উপকূল তাবলরচর এলাকায় বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। বিগত ২০০৬ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ মাসে তা শেষ হয়। বিগত ২০০৮ সালের মার্চ মাসে প্রকল্পটি পরীক্ষামুলকভাবে চালু করা হয়। ঐ বছর (২০০৮) ১৪ এপ্রিল এ প্রকল্পটি গ্রাহকদের নিকট উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তখনই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আলী আকবর ডেইল এলাকায় কিছু সংখ্যক গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও বেশী দিন ঠেকেনি।  বিগত ২০০৮ সালের প্রাকৃতিক দূর্যোগে জলোচ্ছাসে ৫০টি বায়ুকল পাখার (উইং) মধ্যে অধিকাংশ পাখা ভেঙে পড়ে। প্রকল্পটি বিউবোর তত্বাবধানে প্যান এশিয়া পাওয়ার সাভির্সেস লিমিটেড একটি সংস্থা বাস্তবায়িত করেছিল। এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫০ টি বায়ুকল (উইং টারবাইন) স্থাপন করেছিল ঠিকাদার। প্রতিটি বায়ুকল থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা রাখে। একটি বায়ুকলকে একটি ইউনিট ধরা হয়। প্রতিটি ইউনিটে ৫০ মিটার উচুঁ একটি টাওয়ার ও টাওয়ারের মাথায় দেড়টন ওজনের ডানা বিশিষ্ট একটি ইস্পাতের পাখা স্থাপন করার কথা থাকলেও পাইবারের পাখা ব্যবহার করা হয়েছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। একটি উইং টারবাইন থেকে আরেকটি টারবাইনের দুরত্ব তিনশ গজ। বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের যন্ত্রগুলোতে টাওয়ার জেনারেটর কন্ট্রোল ,প্যানেল, সাব-ষ্টেশন ও টারবাইন ব্লেডও রয়েছে।
শান্তিবাজার এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক নজির আহমদ জানান, বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা বলে পিডিবি কর্তৃপক্ষ এ এলাকার প্রায় তিন’শ গ্রাহক থেকে মিটার লাইন দেয়ার কথা বলে আট থেকে দশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। মিটার ও লাইন সংযোগ দিয়েছে। কিন্তুু বিদ্যুৎ সরবরাহ করেনি। বর্তমানে আলী আকবর ডেইল বাসী বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত।
কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী সাজিউজ্জামান সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমানে আলী আকবর ডেইল এলাকায় প্রায় তিন’শ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের যান্ত্রিক ক্রুুটির কারণে প্রকল্পটি অনেকদিন বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নষ্ট থাকা বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি পূণঃ মেরামত ও নতুন প্রকল্প তৈরী করার জন্য আরো প্রায় ১২ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেন। বর্তমানে ঐ নতুন প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আলী আকবর ডেইল এলাকায় তিন’শ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা নুরুচ্ছাফা বিকম জানান,বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি কুতুবদিয়া দ্বীপের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। কিন্তুু মানুষের কোন ধরণের উপকারে আসছে না। এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য বিদ্যুৎ লাইন,গ্রাহকদের নিকট মিটার বিক্রিসহ সকল প্রক্রিয়া পিডিবি কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করে। কর্র্তৃপক্ষ ঐ গ্রাহদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নবাসী বায়ুবিদ্যুতের কারণে দীর্ঘ এক যুগেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোন ধরণের বিদ্যুৎ সুবিধা পায়নি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুতুবদিয়া উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি রক্ষার জন্য পাউবোর অর্থায়নে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুনভাবে একটি প্রকল্প তৈরী করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: