নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: দেশের অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের মতো কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কও গত শুক্রবার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন পর্যটক-দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও গতকাল থেকে ভিড় বাড়তে শুরু হয়েছে।
স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটককেও এই পার্ক ভ্রমণ করতে দেখা যায়। পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছেন, আর কয়েক দিন গেলে উপচে পড়া ভিড় শুরু হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বেষ্টনীকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। চারদিকের বাউন্ডারি দেয়াল, বিভিন্ন প্রাণীর স্থাপনাও নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে সড়কগুলো মেরামত করা হয়েছে। করোনার কারণে একটানা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পার্ককে। এতে বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষণীয় স্থান প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বনাঞ্চলে গড়ে তোলা দেশের একমাত্র এই সাফারি পার্ক। করোনার বিধিনিষেধের কারণে মানুষের প্রবেশ বন্ধ ছিল বেশ কয়েক মাস। এতে বিভিন্ন পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণীর প্রজননের ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে। বিরল প্রজাতির প্রাণির ঘরেও এসেছে নতুন অতিথি।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বেষ্টনীর কাছে মানুষের বিচরণ না থাকায় পার্কে থাকা বন্যপ্রাণী ও পশু-পাখির ঘর আলোকিত করে এসেছে নতুন অতিথি। এর মধ্যে বন্ধকালীন বাচ্চা প্রসব করেছে বিরল প্রজাতির আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিষ্ট, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, বিলুপ্তপ্রায় কালিম পাখি, সাধারণ প্রজাতির ময়ূরসহ নানা পশু-পাখি। শীঘ্রই বাঘের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে, যার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বাঘ ও সিংহ বেষ্টনীতে।
পার্কের ড্রেসার দিদারুল আলম ও মোরশেদসহ পার্কের একাধিক কর্মচারী চকরিয়া নিউজকে বলেন, অনেকটাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে সাফারি পার্কের পরিবেশ। মাদার ট্রিসহ (গর্জন) পার্কের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ-গাছালির সাথে আপন মহিমায় বেড়ে উঠছে রকমারী ফুল, লতাগুল্ম। সুনশান পরিবেশে সময় কাটিয়েছে বিভিন্ন পশু-পাখি ও তৃণভোজী বন্যপ্রাণী। লেকের পানিতে খেলা করছে সাদা বক, বেষ্টনীতে পানিতে সাঁতরাচ্ছে জলহস্তি। মানুষের শব্দ শুনলেই এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির হরিণের দল মুহূর্তের ঢুকে পড়ছে জঙ্গলের ভেতর। আর বানরের দল তো পুরো পার্ক জুড়েই করছে রাজত্ব। আফ্রিকান জেব্রার দল বিশাল বেষ্টনীতে সদলবলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাঁচার ভেতর সময় কাটছে বাঘ ও সিংহের। বাঘ ও সিংহ বর্তমানে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। এতে প্রজননের বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, এই পার্কটির শিক্ষা, গবেষণা, চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ভারতের কানহা ন্যাশনাল পার্কের মতো যদি বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় পার্কটিও বন্ধ রাখা যায় তাহলে এখানে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী ও পশু-পাখির প্রজননে সফলতা আসবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে অনেক প্রাণী ও পশু-পাখির ঘরে এসেছে নতুন অতিথি।
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, করোনায় বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সরকারি নির্দেশনার আলোকে পার্কটি খুলে দেওয়া হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন জনমানবশূন্য থাকায় পার্কে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রজননে বেশ সফলতা এসেছে। পুরো পার্কজুড়ে ছিল তাদের রাজত্ব। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় পুরো পার্ক এখন সুশোভিত। আশা করছি, আগের মতোই দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমনে আবার মুখর হবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।
পাঠকের মতামত: