ঢাকা,শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চালের দাম আকাশচুম্বি্

riceঅনলাইন ডেস্ক :::

বাজারে কিছুতেই কমছে না চালের দাম। বরং ১ মাসের ব্যবধানে বস্তা প্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে ৫০ টাকার নিচে নেই। একটু ভাল হলে সেই চালের দাম রাখছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, এতে সাধারণ মানুষ খুবই অস্বস্তিতে আছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের একেবারে নাভিশ্বাস হওয়ার অবস্থা। তাদের দাবী দৈনিক আয়ের বেশির ভাগ টাকা চাল কিনতেই চলে যায়।
এদিকে বার বার ধানের বাম্পার ফলনের পরও কেন বাজারে চালের দাম এত বেশি তা বুঝতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এখানে ব্যবসায়িরা কোন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বাড়তি দাম নিয়ে একই উত্তর দিয়ে আসছে বিক্রেতারা। তারা ঢাকা-নারায়নগঞ্জ থেকে বাড়তি দামে কিনছে তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছে।
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা রিক্সা চালক বোরহান উদ্দিন বলেন, আমি সারাদিন রিক্সা চালিয়ে খুব বেশি হলে ৪৫০/৫০০ আয় করি। এর মধ্যে রিক্সা ভাড়া দিতে হয় ৮০ টাকা আর বাকি যা থাকে তার মধ্যে চাল কিনতেই লাগে ২০০ টাকা। এখন আপনি বলেন বাকি ১৭০ বা ২২০ টাকা দিয়ে কি মাছ কিনবো নাকি তরকারি কিনবো, নাকি ছেলে মেয়েদের জামা কাপড় বা পড়া লেখার খরচ দিব। আমাদের অতীতে কোন দিন এত বেশি দামে চাল কিনতে হয়নি।
একই সময় দিনমজুর রুহুল আমীন বলেন, প্রতি দিন খুব ভোরে কালুর দোকান রাস্তাতে বসে থাকি কাজের আশায়। যা কাজ পায় তাই করি। দৈনিক ৫০০ টাকা বা মাঝে মধ্যে মালিকের ইচ্চা হলে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যায় বাজার করতে গেলে শুধু চালেই চলে যায় বেশির ভাগ টাকা। কারণ বাজারে এখন ৫০ টাকার নীচে কোন চাল নেই। তার চেয়ে একটু কম দামে ৪৬/৪৮ টাকার কিছু চাল আছে সেটা আমরা খেতে পারি না। আর সেই চাল বাড়িতে নিয়ে গেলে আরও অশান্তি হয়। কারণ হয় পাথর থাকে, না হলে ধান বেশি থাকে। সাথে ভাঙ্গাতো আছেই। অর্থাৎ খাওয়ার উপযুক্ত না। অথচ যে চাল এখন ৫০ টাকা দিয়ে কিনছি সেই চাল ৩ মাস আগেও ৩৮ টাকা আর ১ বছর আগে ৩০ টাকা দরে কিনেছিলাম। আর ৫০ টাকা দিয়ে এখন যে চাল কিনি সেটাও মোটামুটি মানের। এর চেয়ে একটু ভাল কিনতে চাইলে ৫২ টাকা বা ৫৪ টাকা লাগে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই দ্রুত চালের দাম কমানো দরকার। না হলে আমরা গরীব মানুষ না খেয়ে থাকতে হবে।
এদিকে শুধু নি¤œবিত্ত নয় অনেকটা মধ্যবিত্ত ঘরেও চালের বাড়তি দামের প্রভাব পড়ছে। এব্যাপারে বাহারছড়া এলাকার রফিকুল আলম বলেন, ২ বছর আগে যে চালের বস্তা ১৫০০ টাকা আর কিছু দিন আগে যে চালের বস্তা ১৭৫০ বা ১৮০০ টাকা দিয়ে কিনতাম, সেটা এখন ২৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। সরকার যদি এই প্রধান খাদ্যই মানুষকে খাওয়াতে না পারে তাহলে এত উন্নয়ন দিয়ে কি হবে? যদি আমার পেটে ভাত না থাকে তাহলে দেশের ব্রিজ রাস্তা ঘাট দিয়ে আমার কি কাজে আসবে। তার উপর সবধরনের নিত্য পন্যের দামতো আছেই।
একইভাবে ঠিকাদার হারুন উর রশিদ বলেন, রাজনৈতিকভাবে কে কি করলো কে কত ভাবে সফল আর ব্যর্থ হলো সেটা সাধারণ মানুষ বুঝে না। সাধারণ মানুষ বুঝে কম দামে কোন সরকার চাল খাওয়াতে পেরেছে সেটা। তাই আমি মনে করি সরকারের এই বিষয়ে বেশি নজর দেওয়া দরকার। প্রতিদিন অনেক মানুষের সাথে কথা হয় যখনি ঘরোয়া বিষয়ে কথা হয় তখন বলে চাল সহ নিত্য পন্যের দাম বেশি যার ফলে সংসার চালাতে কস্ট হচ্ছে। কিছু দিন আগে সংবাদ মাধ্যমে দেখেছিলাম সরকার বিদেশে চাল রপ্তানী করছে আমি বুঝতে পারছি না যেখানে দেশে ৫০ টাকার নীচে মানুষ চাল কিনতে পারছে না সেখানে বিদেশে কেন চাল দিচ্ছে। সরকারের উর্ধ্বতন মহলে সেই খবর পৌছানো দরকার।
এদিকে প্রফেসর জাফর আহামদ বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে ব্যবাসিদের কোন কারসাজি আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আর বার বার শুনি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাহলে কেন চালের দাম মাসে মাসে বাড়ছে সেটা বুঝতে পারছি না। চালসহ নিত্যপন্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা খুব বিব্রত।
এদিকে চাল বাজার এলাকার কয়েক জন ব্যবসায়ি জানান, আমরা মূলতঃ ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম থেকে চাল কিনে এনে ব্যবসা করি। সেখানে দাম বাড়লে আমাদের এখানে বাড়ে। জানি না কি কারণে পাইকারী বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তবে আমরা জানতে চাইলে তারা বলে বাজারে চালের সংকট আছে আর পরিবহণ খরচ সহ সব কিছুর দাম বাড়া তাই চালের দাম বাড়তি। তবে সম্প্রতি ভারত থেকে চাল আমদানী হতে পারে তখন আবারো চালের দাম কমতে পারে।
এদিকে কক্সবাজার শহরের বড় বাজার এলাকার বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ির কাছে চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের সেই গতবাধা উত্তর, আমরা বাড়তি দামে কিনে আনছি তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ.ক.ম শাহরিয়ার বলেন, আমাদের কক্সবাজারে বছরে ২৫ হাজার মে্িট্রকটন খাবার বাড়তি থাকে। এখানে সংকট হওয়ার কোন কারণ নেই। আসলে কক্সবাজারে নামে-বেনামে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা আছে তাদের যদি দৈনিক জনপ্রতি ৪শত ৫৩ গ্রাম করে চাল প্রয়োজন হয় তাহলে আপনারাই চিন্তা করুণ দৈনিক কত চাল লাগতে পারে। এছাড়া আমাদের এখানে পর্যটকদের একটি বিশাল চাপ আছে তাদের সেই প্রভাবও পড়ছে। তাই চালের দামের উপর প্রভাব পড়ছে।

পাঠকের মতামত: