ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের সড়কে ১৩ দিনে ১৩ লাশ

নিউজ ডেস্ক ::
কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন সড়ক কেড়ে নিচ্ছে তাজাপ্রাণ। শুধু দূরপাল্লার যাতায়াতে নয়, শহরের ভেতরও একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। মে মাসের প্রথম তের দিনে কক্সবাজার জেলায় নয়টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ২ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক লোকজন।
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র কক্সবাজার জেলা সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‌‘কক্সবাজারে প্রতিদিন যে হারে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে তাতে প্রশ্ন ওঠে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কোথায়? কখনো বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মুখোমুখি সংঘর্ষ, পথচারীকে সজোরে ধাক্কা, বেপোরোয়া ও অদক্ষ চালকের কারণের সড়কে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে।’
তিনি আরও বলেন,’নিসচা’র তৈরি প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে মে মাসে। অন্যান্য মাসের গড় মৃত্যুর হার পাঁচজন না পেরলেও এ মাসের প্রথম ১৩ দিনেই সড়ক কেড়ে নিয়েছে ১৩ জন শিশু, নারী ও পুরুষের প্রাণ।’
নিসচা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ১৩ মে তিনজন, ১২ মে দুই, ১০ মে দুই, ৯ মে দুই, ৩ মে দুই ও ২ মে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিৎ বডুয়া জানান, ১৩ মে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হোয়াইক্যংয়ের কানঞ্জরপাড়া মসজিদের সামনে ম্যাজিকগাড়ির ধাক্কায় মেহেদী হাসান (২০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস জানান, ১২ মে দিনগত রাত দুইটায় কুতুবদিয়ার দরবার রাস্তা মাথায় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার গৌরাঙ্গ প্রকাশের ছেলে রঞ্জিত প্রকাশ লালু (৪৫) ও নয়াপাড়া এলাকার শাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক (২০) নিহত হয়। এসময় রাজীব চাকমা নামে অপর আরেকজন আরোহী আহত হয়।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিনহাজ উদ্দিন জানান, ১২ মে বিকেলে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডির কালু ফকির পাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বেগম একই ইউপি’র ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী বেগম বাহার (৫০) নিহত হয়েছেন।
মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আলমগীর হোসেন বলেন, ১২ মে ভোরে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে মিনিট্রাক চাপায় নিহত হয় চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ি গ্রামের মো. মানিকের ছেলে সাকিব (৭)।
তিনি আরও জানান, ১০ মে সকালে চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বালুভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ভূবনখিল গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রিফাত উদ্দিন (৮)নিহত হয় । ওই সময় আরো ৫ জন আহত হয়েছে। একই দিন বিকেলে খেলতে গিয়ে সদর উপজেলার ইসলামপুর খেলারমাঠ এলাকায় যাত্রিবাহী বাসের ধাক্কায় একই ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী আমান উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ কাউছার (৭)।
পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, ৯ মে রাতে পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যাঘোনা এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উল্টে ৮ মাস বয়সী মো. সামির নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন তার ভাই মো. আবিদ (২) ও মা শাহেদা বেগম (৩২)।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, ৯ মে দুপুরে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা এলাকায় মিনিবাস -ইজিবাইক) সংঘর্ষে মো. সোলতান নামের এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়। ওই সময় আহত হয় আরও ২ জন।
তিনি আরও বলেন, ৪ মে দুপুর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কক্সবাজার জেলা বিএনপির সদস্য সিরাজুল হক ডালিম।
একই ঘটনায় ২ মে বিকেলে উখিয়ার রাজাপালং মাদ্রাসার সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি – ডাম্পারের সংঘর্ষে নিহত হয় কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ- সভাপতি সিরাজুল হক।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিৎ বড়ুয়া জানান, ৩ মে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কাস্টম এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মো. নছু মিয়া (১২) ও খালেদ হোসেন (১৬) নামের দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন ) এর কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রাফিক আইন না মানা, বেপেরোয়া গতি, অদক্ষ চালক সড়ক অসংখ্য বাকের কারণে কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।
তিনি আরও বলেন, জনগণ একটু সচেতন হলেই সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল দুর্ঘটনা, ড্রাইভিং লাইসেন্সহীন চালকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে জনগণ যদি সচেতন না হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না।

পাঠকের মতামত: