সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীর ফুলছড়ি-নাপিতখালী বনবিটের পাচগাছিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ৩টি অবৈধ মৎস্য ঘেরের বাধঁ কেটে দিয়েছে বনবিভাগ। বিভাগীয় বনকর্মকর্তা হক মাহবুব মুশের্দের নির্দেশে গত রবিবার সকাল ১১ টার সময় ফুলছড়ি এসিএফ মুহাম্মদ বেলায়ত হোসেন সঙীয় ফোর্স নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এসময় ১টি টং ঘর গুড়িয়ে দিয়ে জব্ধ করা হয় টিউবওয়েল ও উদ্ধার করা হয়েছে ৩ একর রির্জাভ বনভুমি। অভিযানে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, ফুলছড়ি বিট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, নাপিতখালী বিটকর্মকর্তা আজমল হোসেন মন্ডল, বনপ্রহরী আজিজ, আল আমিন, আরিফ, উত্তম দত্ত, হেডম্যান আশরাফ আলী, আবদু শুক্কুরসহ ভিলেজাররা অংশ নেন।
ফুলছড়ি রেঞ্জ সুত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর রাতে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের জঙল খুটাখালী মৌজার ফুলছড়ি বনবিটের অধীন মিঝিরঘোনা, কেরামতের ঘোনা ও প্রফেসরঘোনা নামের তিনটি পয়েন্টে ঘটেছে গাছ লুটের ঘটনা। ঘটনাটি জানতে পেরে ওইদিন রাতে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও হক মাহাবুব মোর্শেদ ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাককে নির্দেশ দেন ঘটনাস্থলে গিয়ে লুট হওয়া কাটা গাছ উদ্ধার ও গাছের মোথার নমুনা সংগ্রহ করতে। পরদিন ৩০ নভেম্বর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বনবিভাগের নিয়োজিত ভিলেজারসহ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাকে সাথে নিয়ে বনাঞ্চলে ঢুকে গাছের মোথা গুলো সনাক্ত করেন। পরে গতকাল রবিবার ফুলছড়ি এসিএফ মুহাম্মদ বেলায়ত হোসেন সঙীয় ফোর্স নিয়ে এসব এলাকা থেকে ৩টি অবৈধ মৎস্য ঘেরের বাধঁ কেটে দিয়ে উদ্ধার করা হয় ৩ একর রির্জাভ বনভুমি।
ঘটনার সত্যত্যা স্বীকার করেছেন ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ডিএফও স্যারের নির্দেশে এসিএফ মহোদয়ের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ১টি টং ঘর ভেঙে দিয়ে ৩টি অবৈধ মৎস্য ঘেরের বাধঁ কেটে দেয়া হয়েছে। ৩ একর বনভুমি উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, গাছ কাটার ঘটনাটি ফুলছড়ি বনবিটের অধীন ঐএলাকায় অবৈধ মৎস্য ঘের করেছেন কতিপয় বাস্তুহারালীগ নামের সাইনবোর্ড সর্বস্ব সংগঠন। মৎস্য ঘেরের পেছনে বনবিটের অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারে জানিয়ে তারা তদন্ত পুর্বক প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনের অনুরোধ জানান।
এদিকে বনাঞ্চল থেকে গাছ লুটের ঘটনায় বনবিভাগের ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে গত ২ ডিসেম্বর চকরিয়া থানায় সন্দেহভাজন চারজনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বনবিট কর্মকর্তার দায়ের করা এজাহারটিতে কাঁকতলীয় ভাবে আসামি করা হয়েছে গাছের মোথা সনাক্ত করতে রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে ঘটনার পরদিন বনাঞ্চলে সহায়তা করতে যাওয়া আবুল কালাম ও জাকের আহমদ নামের দুই নিরীহ ব্যক্তি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, বনকর্মীদেরকে সহায়তা করতে গেলেও এখন অনেক নিরীহ মানুষ মামলার আসামি হচ্ছে। ইতোপুর্বে এ ধরণের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থার কারনে বনজসম্পদ রক্ষায় বনবিভাগকে সহায়তা করতে একপ্রকার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে স্থানীয় জনগন। বিষয়টি বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে সুনজরে দেখা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বিষয়টি অবহিত করা হয় কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বনসংরক্ষক হক মাহবুব মুর্শেদকে। তিনি বলেন এ ধরণের ঘটনা দু:খজনক। বনবিট কর্মকর্তা মামলার এজাহারে কারো নাম সংযুক্ত করলে, তিনি যদি সত্যিকার অর্থৈ অপরাধী না হন তাহলে ওই ব্যক্তিকে মামলা থেকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা রেঞ্জ কর্মকর্তা, সহকারি বনসংরক্ষকের হাতে রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
পাঠকের মতামত: