শফিউল্লাহ শফি, কক্সবাজার::
কক্সবাজারে আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ হেফাজতে থাকা এসব ব্যবসায়ীর জবানবন্দি সম্প্রতি নেয়া হয়েছে। সাবেক এমপি বদির তিন ভাই, উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে, পৌর কাউন্সিলর, অর্ধডজন ইউপি সদস্যসহ ২৫ গডফাদার এবং ৩৮ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংক্ষিপ্ত জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় দেয়া জবানবন্দিতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অনেক রথী-মহারথীর তথ্য দিয়েছেন। ইয়াবা ব্যবসার টাকার ভাগ নেয়াসহ মাসিক মাসোয়ারা নিত তারা। এসবের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রকার আসবাবপত্র এবং হরেকরকম উপহার নেয়াসহ ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
আত্মসমর্পণকারী প্রত্যেক ইয়াবা ব্যবসায়ী জবানবন্দি দিয়েছেন। এ থেকে অনেক অজানা কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জবানবন্দি রেকর্ডকারী কর্মকর্তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন। ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের দেয়া তথ্যের ক্রস চেকও করেছে পুলিশ।
যারা আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের সেফহোমে রয়েছে তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে এবং বিভিন্ন সময়ে উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরের অসাধু রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নিত। পাশাপাশি ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় উপহারও তারা আদায় করত দেদারসে। এছাড়া মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দ ইয়াবা ও আটক ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করত এসব রথী-মহারথী।
সূত্র আরও জানায়, মাসোয়ারা আদায় ও ইয়াবা ভাগবাটোয়ারায় মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের শীর্ষে রয়েছে- উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এক এমপি, টেকনাফের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, তার ছেলে তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার ও টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান, আরও দুই জনপ্রতিনিধি এবং দালালের নাম।
এছাড়া মোটা অঙ্কের অর্থের মাধ্যমে তদবিরবাজ হিসেবে শহরের কয়েকজন অসাধু রাজনৈতিক নেতার নাম এসেছে। টেকনাফের তিন সাংবাদিকের নামও রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি তারা নিজেরাও মরণ নেশা ইয়াবার ব্যবসায় সরাসরি জড়িত ছিল। এদিকে টেকনাফের মতো কক্সবাজারের গুটিকয়েক প্রভাবশালী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নামও উঠে এসেছে।
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায়ের ব্যাপারে তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার ও টেকনাফ সদর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান জানান, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। শাহাজাহানের বড় ভাই দিদার পুলিশের সেফহোমে গেছেন। বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ এবং তিন ভাই ইয়াবা গডফাদার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান শাহাজাহান বলেন, বাসায় মেহমান এসেছে। একটু পরে ফোন দিচ্ছি বলে ফোনলাইন তিনি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন বলেন, যারা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তাদের পৃথক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে যা হতবাক হওয়ার মতোই। তবে সব তথ্য ক্রস চেকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ কথা একটাই- মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউই রেহাই পাবে না।সুত্র : যুগান্তর
পাঠকের মতামত: