কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কিছু দিন আগে পিএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্টানের বার্ষিক পরীক্ষা চলমান। আর কিছু দিন পরে দেশের সরকারি বেসরকারি নামীদামি শিক্ষা প্রতিষ্টানে ভর্তিচ্ছুক ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তি যুদ্ধ শুরু হবে। আর এ ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হয়ে কাংঙ্খিত শিক্ষা প্রতিষ্টানে ভর্তি হওয়ার বাহনা থাকে পড়ুয়াদের। ভর্তি বা বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিকল্প হিসাবে সন্তানদেরকে এলাকার বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করা বর্তমানে অভিভাবকদের কাছে ছোয়াচে রোগে পরিণত হয়েছে।
সেই সুযোগে শ্রেণি ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা ও বোর্ড পরীক্ষাসহ বিভিন্ন একাডেমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার নামে কক্সবাজারের সব ক’টি উপজেলা কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার বাণিজ্য জমে উঠেছে। তাদের বাসা-বাড়ী এখন যেনো এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব দর্শকের ভুমিকায় রয়েছে।
জেলার সকল উপজেলা, পৌরশহরসহ প্রত্যন্ত গ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্টানেও কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বানিজ্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কোচিং বানিজ্যের রোষানলে পড়ে দেউলিয়ার পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থা। ২০১২ সালে শিক্ষকদের অবৈধ প্রাইভেট কিংবা কোচিং বানিজ্য বন্ধে সরকার একটি বিশেষ নীতিমালা প্রনয়ন করলেও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি ও দায়িত্বহীনতায় তা মুখ থুবড়ে পড়ছে। অথচ নীতিমালা বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে চলছে শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বানিজ্য। নানা কারনে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে ওইসব অবৈধ কোচিং সেন্টারগুলোতে। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা ও কেজি- কিন্ডারগার্ডেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষকদের এ কোচিং বানিজ্য এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মতো প্রসার ঘটেছে।
সরকারী-বেসরকারী ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত ক্লাসে ইংরেজী, গণিত, আইসিটি, হিসাব বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ান না। আবার অনেক শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাঠদানকালীন সময়ে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়া ও কোচিং সেন্টারে পড়তে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং কেউ কেউ ওই সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিজেদের কোচিং বানিজ্যে সময় দিচ্ছে।
এ দিকে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় কক্সবাজার পৌরশহরসহ এ অঞ্চলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া চলছে দায়সারা ভাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটিতে অনভিজ্ঞ, দলীয় নেতা-কর্মী ও অশিক্ষিত লোকদের স্থান পাওয়ায় গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলছে। ম্যানেজিং কমিটির সাথে শিক্ষকদের এবং প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষের সাথে সহকারী শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে নানা বিষয় নিয়ে বির্তকতো আছেই। যে কারনে শিক্ষকদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে আর কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়া ছাড়া কোন শিক্ষার্থীদের উপায় নেই। এ সুযোগে শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওইসব কোচিং বানিজ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাথে কন্টার্কে বিভাগ ভিত্তিক (বিষয়ওয়ারী) ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন নামে কোচিং সেন্টার
সরেজমিন দেখা গেছে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের মুল ফটকের দরজায়, ও আশপাশে, এমনকি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দরজায় পর্যন্ত হরেক রকম কোচিং সেন্টারের লোভনীয় অফার সম্বলিত অসংখ্যা পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন নামে কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি। আর প্রত্যেক স্কুলে তো প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্য চলমান আছেই। এসবের বাইরে শহর কেন্দ্রীক সরকারি নীতিমালা লঙ্গন করে কোচিং সেন্টার খুলে বিভিন্ন লোভনীয় অফারে পোষ্টারিংয়ে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর শিক্ষা ব্যবসায়ীরা।
শিক্ষাবিদদের বক্তব্য
কক্সবাজার মহিলা কলেজের অধ্যপক জসিম উদ্দিন বলেন, কোচিং বাণিজ্য আইন করে বন্ধ করা যাবে না। এটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদের নৈতিক দিক থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হওয়া দরকার। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায় এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নেই।
এলাকার সচেতন মহলের বক্তব্য
অভিভাবকদের পক্ষে এড: মোঃ জিয়াউল কবির বলেন, বিদ্যালয়ে অবৈধ কোচিংবাণিজ্য বন্ধের জন্য ‘দ্য রিকগনাইজ নন-গভর্নমেন্ট সেকেন্ডারি স্কুল টিচার্স টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস সার্ভিস রেগুলেশনস-১৯৭৯’ আইনের যথাযথ প্রয়োগ করলেই হবে। আর কিছু লাগবে না।
শিক্ষানুরাগী আকতারুল ইসলাম বলেন, কোচিং ব্যবসা একদিনে এতদূর প্রসার লাভ করেনি। তাই বন্ধও একদিনে করা যাবে না। এ জন্য দরকার ব্যাপক জনমত। তিনি বলেন, হাইকোর্টও নির্দেশ দিয়েছেন, তবুও কোচিং বন্ধ হয়নি। তবে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ছাড়া এ কাজে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
কোচিং মালিকদের বক্তব্য
এ ব্যাপারে জানার জন্য (পরিচয় গোপন রেখে) কক্সবাজার “প্রতিভা কক্স”কোচিং সেন্টারে ফোন করলে মোহাম্মদ আবুল কাশেম নাম পরিচয়ে এক ব্যক্তি জানান, তারা ইন্টারের ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করছে, আজ থেকে কোচিং শুরু হয়েছে। পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত চলবে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ২ঘন্টা করে পড়ানো হয়। প্রয়োজনে শুক্রবারেও ক্লাস নেয়া হয়। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই শত ক্লাস করে থাকে। এসময়ে ভিতর ছাত্রীদের নিকট থেকে মডেল টেষ্টসহ প্রায় ৭৮টি পরীক্ষাও নেয়। আর বিভাগ অনুযায়ী কোচ ফি ধরা আছে। কমার্সে ৬ হাজার টাকা করে নিচ্ছে বলে জানান।
ছাত্র ছাত্রীদের বক্তব্য
ক্লাসে বোঝানো হয় না, তাই কোচিং করছে কক্সবাজার সরকারি বালিকা স্কুলের ছাত্রী সানজিদা হক তৃষা। নিজ স্কুলের শিক্ষককের কাছেই গণিত ও ইংরেজি কোচিং করে। তৃষার মতো লাখ লাখ শিক্ষার্থীর একই মনোভাব- ক্লাসে বুঝি না। বোঝানো হয় না।
শিক্ষা অফিসারের বত্তব্য
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন কোন প্রতিষ্টানের শিক্ষকেরা প্রাইভেট বা কোচিং বানিজ্য করে থাকলে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: