ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারির চাষ

শাহীন মাহমুদ রাসেল ::  কক্সবাজার জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে সুপারির চাষ। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার সুপারির হাট জমে উঠেছে। কক্সবাজারের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুপারি যাচ্ছে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের অন্তত ২০টি জেলায়। এসব হাট সামনে রেখে জেলার প্রায় ২ হাজার মৌসুম ব্যবসায়ী ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবছরে সুপারির দাম বেশি তাই বেশ খুশি স্থানীয় সুপারি চাষিরা।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব থেকেই সুপারি উৎপাদন হতো এ জেলায় কিন্তু তখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ হতো না। তখন শুধু জেলার বিভিন্ন বসত ভিটার চারপাশে, বিভিন্ন পতিত জমিতে, ঘের অথবা পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে সুপারি গাছ ছিল। সুপারির ফলন ভাল হওয়ায় ও বাজারে এর দাম ভাল থাকায় জেলার চাষিরা সুপারি চাষের দিকে আগ্রহ দেখায়। ১০ বছর আগে জেলার চাষিরা ছোট পরিসরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ শুরু করে। আর এ চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন সুপারি চাষ বেড়েছে। চলতি বছরে জেলায় ৪৪৫ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৩৫ মেট্রিকটন।

জানা গেছে, জেলায় মোট প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে জেলায় সুপারি বাগান অনেক থাকলেও বাণিজ্যিক ভাবে ৬শ ৪৫ হেক্টর জমিতে এ চাষ করা হয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলাতেই এ চাষ ভাল হয়। তবে রামু, সদর, উখিয়া, টেকনাফ এই চার উপজেলাতে সুপারি চাষ অনেক বেশি। সাধারণত উখিয়া-টেকনাফের মাটিতে সুপারি চাষ ভাল হয়। জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু করে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সুপারির চারা লাগানো হয়। ৫ ফুট বাই ৫ ফুট দূরত্ব রেখে প্রতিটি চারা লাগাতে হয়। চারা লাগানোর ৭-৮ বছর পর থেকে ফল আসা শুরু হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গাছে ফুল আসে ফুল থেকে ফল হয় এরপর আশ্বিন-কার্তিক মাসে পরিপক্ক সুপারি গাছ থেকে পাড়া হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ২.৬৮ মে.টন সুপারি উৎপাদন করা হয়। সুপারি গাছে তেমন কোন রোগ হয়না। তবে সুপারি পাকার আগে কোন কোন গাছে সুপারিতে পোকা লাগে। এক প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ করে সেটি দমন করা যায়। একটি গাছ থেকে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ বছর একভাবে ফল পাওয়া যায়।

কক্সবাজারে সাধারণত বিভিন্ন হাটে -বাজারে সুপারি বেচাকেনা হয়। তবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী হাট উখিয়ার সোনারপাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার, কোটবাজার এবং রামু বাজার। সুনারপাড়া বাজারে প্রতিদিনই সুপারি বেচাকেনা হয়, তবে রবিবার ও বুধবার বড় পাইকারী হাট বসে। রামু বাজারে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবারে সুপারির বড় পাইকারী হাট বসে, এহাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমে জেলায় শতাধিক হাট, বাজার ও বিভিন্ন স্থানে সুপারি বেচা কেনা হয়। চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে সেগুলো বিক্রি করে থাকেন। কাচা সুপারি রোদে শুকিয়ে সুপারির খোসা (খোলস) ফেলে দিয়ে প্রতি কেজি শুকনা সুপারি ৪শ থেকে ৭শ টাকা দরে বিক্রি করে। পাকা সুপারি বাজার থেকে কেনে পানিতে ৩ থেকে ৪ মাস পচন দিয়ে (ভিজিয়ে) সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন, পানিতে ভেজানো সুপারিকে স্থানীয় ভাষায় ভিজা সুপারি বলে, এই ভিজা সুপারির চাহিদা বেশি তাই দামও ভাল পাওয়া যায়।

চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। চারা লাগানোর প্রথম ২-৩ বছর একটু কষ্ট করতে হয়। তখন ছোট চারা গরু ছাগলে খেয়ে ফেলার ভয় থাকে। প্রথম দিকে জমিতে স্বল্প পরিমাণ সারও দিতে হয়। ৫-৬ বছর পর গাছে ফল আসে। একবার ফল আসলে একাধারে অন্তত ৪০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফল আসার পরে তেমন কোন খরচ হয়না। প্রতিটা গাছ থেকে বছরে আকারভেদে ৩শ থেকে ৫শ পিস সুপারি পাওয়া যায়।

সোনার পাড়া বাজারের ব্যাবসায়ী আব্দুল্লাহ আল আজিজ জানান, স্থানীয় ভাবে ৮০ পিস সুপারিতে এক পন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি পন সুপারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি এতে আমাদের লাভ ভাল হয়।

সদর উপজেলার খরুলিয়া গ্রামের সুপারি ব্যাবসায়ী ছৈয়দ নুর জানান, সে ১৪ বছর যাবৎ উখিয়া-টেকনাফ থেকে সুপারি কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে। তিনি প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক সুপারি কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে বিক্রি করেন।

সদর উপজেলার খরুলিয়া গ্রামের সুপারি চাষি নাছির উদ্দিন জানায়, বাপ দাদার আমল থেকেই আমাদের বাড়িতে অনেক সুপারি গাছ ছিল। প্রতি বছর আমি বসত ভিটার সুপারি গাছ থেকে অনেক সুপারি বিক্রি করি। গত ৭ বছর পূর্বে এক একর ২২ শতক জমিতে সুপারি বাগান করেছি। আমার নতুন বাগানে গত বছর থেকেই কিছু কিছু গাছে ফল এসেছিল। এবছর বাগানের প্রায় সব গাছেই ফল হয়েছে। এবছরে আমার বাগানে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি খরচ বাদে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা লাভ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আ,খ,ম শাহারীয়ার বলেন, জেলার মাটি সুপারি চাষের জন্য খুব উপযোগী। সুপারি একটি লাভ জনক ফসল হওয়ায় জেলার অনেক চাষিরা তাদের পতিত জমিতে সুপারির বাগান করছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।

পাঠকের মতামত: