কক্সবাজার প্রতিনিধি :: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল থেকে সৃষ্ট বন্যায় কক্সবাজারের কৃষকদের ১ শো ১১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে রোপা আমন গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে কপাল পুড়েছে ৬০ হাজার কৃষকের। বন্যা-পরবর্তী সময়ে দুই হাজার কৃষকের জন্য ১০ মে: টন বি-আর ২৩ বীজ ধান বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য বলছেন, জেলার আট উপজেলার সম্প্রতি বন্যায় ৬০ হাজার ৯০২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ছয় দিনের প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট ঢলে জেলায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ফসলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মোট ফসলী জমির ক্ষতির হার শতকরা ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমাণ ৫৪ হাজার ৪৪ দশমিক ৬ হেক্টর। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ ফসলী জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর। ২৮ হাজার ৯০৫ কৃষকের ৩ হাজার ৯৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৬ হাজার ৭০০ কৃষকের ২০ হাজার ৮২৮ হেক্টর আমন ধান, ৬ হাজার ৫৩২ কৃষকের আউশ ধান এবং ২ হাজার ৪৯৮ কৃষকের ৫৩০ হেক্টর গ্রীষ্ম কালীন সবজি ও ৬ হাজার ২৬৭ কৃষকের ১৬ হাজার ৮৪ হেক্টর শরৎ সবজি নষ্ট হয়েছে।
এদিকে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া। চকরিয়া ২২ হাজার ৩৮৪ কৃষকের ৪ হাজার ৭১ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৪৫ হেক্টর আমন খেত, ৫১২ হেক্টর আমনের বীজতলা, আউশ ৭১২ হেক্টর ও ৬০২ হেক্টর জমির শাক–সবজির পানিতে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৭৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। পেকুয়ায় ১৯ হাজার ৯৯৮ কৃষকের ৪২৭ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে ৬৭ দশমিক ৫ হেক্টর আউশ ধান, ৮৫ হেক্টর সবজি পানিতে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এই দুই উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ দুই হাজার কৃষকের জন্য দশ মেট্রিক টন আমন বি-আর ২৩ বীজ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানের চারাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক খেতে বন্যার কারণে রোপা আমন তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক আবার ফসল ফলানোর জন্য জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। নতুন করে ফসল ফলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছিলেন। বন্যায় তাঁর সব চারা মরে গেছে। সে এখন কি করবে, সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।’
বাংলা বাজার এলাকার কৃষক সিকান্দার বলেন, ‘চারা লাগানোর পর দেড় হাজার টাকার সার দিয়েছিলাম। বন্যায় পানি জমে থাকায় সব চারা নষ্ট হয়ে যায় এবং চারাও নাই। বন্যা-পরবর্তী অবস্থা নিয়ে এখনো তিনি কৃষি বিভাগ থেকে কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতা পাননি।’
খুরুশকুল এলাকার কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘দুই বিঘার মত জমিতে সবজি চাষ করেছি। কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, শাক লাগিয়েছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবার ফসল ফলানোর সময়ও নেই। কি করবো বুঝতে পারছিনা।’
বন্যায় আউশ ও আমন চাষাবাদের পাশাপাশি শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘ ৩ হাজার ৬২০ কৃষকের ৩৮০ হেক্টর আমন ধান, বীজতলা, গ্রীশ্ম, শরৎ কালীন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি টাকার উপরে।
কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো কবির হেসেন।
তিনি বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর দুই হাজার কৃষকের জন্য ১০ মেট্রিক টন বি-আর ২৩ ধান বীজ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ এই ধান আমন ধানের জাত। বন্যা- পরবর্তী সময়ে রোপনে উপযোগী।
পাঠকের মতামত: