শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :
রক্তের অভাবে এক সময় মারা যেত রোগী। এটা খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। কিন্তু সেই দিন আর নেই। দিন বদলেছে। এখন ‘চাহিবা মাত্র’ মিলছে চাহিদা মাফিক রক্ত। শুধু তাই নয়; নিয়মিত রোগীর চাহিদা মিটিয়েও জমা থাকছে অতিরিক্ত রক্ত। প্রয়োজনের যে কোনো মুহূর্তে মিলছে জমানো রক্তও। তা হোক দিন কিংবা গভীর রাত। তবে এত সহজলভ্য হলেও রক্তের জন্য রোগীকে কোনো ধরণের ফি গুনতে হচ্ছে না। মানবতাবাদী মানুষদের দান থেকে মিলছে এসব রক্ত। রক্ত পেয়ে জীবনের অন্তিম মুর্হূত থেকে ফিরে আসছে অহরহ রোগী। পুরো দেশে রক্তদানের এই চিত্র বিরাজমান। কক্সবাজার জেলায় এই চিত্রটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কক্সবাজারে প্রতি বছর বাড়ছে রক্তদানের মানুষ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণাধীন রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র সূত্র জানা গেছে, কক্সবাজারে বছরে ১৪ হাজার ব্যাগের বেশি রক্ত পরিসঞ্চালন হচ্ছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই দানের রক্ত। আর্থিক হিসাবে দান করা এই রক্তের মূল্য দাঁড়ায় ৪ কোটি টাকার উপরে। এই বিপুল অংকের টাকার রক্ত বিনামূল্যে পেয়ে অনেক গরীব ও অসহায় জীবন সঙ্কটাপন্ন রোগী ফিরে পাচ্ছেন নতুন জীবন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণাধীন রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণাধীন রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রে গত ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ২০০ ব্যাগ রক্ত পরিসঞ্চালন হয়। এর মধ্যে দানের রক্ত রয়েছে প্রায় এক হাজার ব্যাগ। ২০১৬ সালের প্রতি মাসেও এই পরিমাণ রক্ত পরিসঞ্চালন হয়েছে। সেখানেও একই পরিমাণ দানের রক্ত ছিলো।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় রক্তদানের বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। সব সংগঠনে অধীনে পাঁচ শতাধিক মানুষ রক্তদান করেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে আরো এক হাজারের বেশি মানুষ রক্তদান করেন। রক্তদান করা সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংগঠন ‘সন্ধানী’, অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘কক্সবাজার ব্লাড ডোনার্স সোসাইটি’, ‘বন্ধুসভা, ‘নুনিয়াছড়া ব্লাড ডোনেট ক্লাব’ কক্সবাজার কলেজ ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’ অন্যতম।
‘সন্ধানী’ কক্সবাজার’ এর সভাপতি মো. রকিবুল হাসান জানান, ‘সন্ধানী’তে ৭০ জন সদস্য রয়েছে। প্রতিটি সদস্য নিয়মিত রক্তদান করেন। সদস্য ছাড়াও শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে দেন ‘সন্ধানী’। ২০১৬ সালে সদস্যরা ৮৬৪ ব্যাগ রক্তদান করেছেন।
ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন ‘কক্সবাজার ব্লাড ডোনার্স সোসাইটি’র এডমিন জাহাঙ্গীর আলম জেক, রক্তের বাধন, আশরাফুল হাসান রিশাদ ও মিনা আকতার জানান, ‘কক্সবাজার ব্লাড ডোনার্স সোসাইটি’র ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তারা প্রতিজনই নিয়মিত রক্তদান করেন। এছাড়া তাদের বড় অবদান হচ্ছে, তারা রক্ত সংগ্রহের করে রোগীদের সরবরাহ করেন। এই সংখ্যা কয়েক’শ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠনটির উদ্যোগে ৫০০ ব্যাগ রক্তদান করা হয়েছে।
কক্সবাজার বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল জানান, প্রতিমাসে বন্ধুসভার ৩০জনের বেশি সদস্য রক্তদান করেন। এই সংগঠনটিও নিজের সদস্যদের রক্তদানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সংগ্রহ করে রোগীদের রক্তদানের ব্যবস্থা করে দেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মারুফুর রহমান বলেন, ‘মানুষের দেহের স্বাভাবিক রক্তকণিকা গুলো ১২০ দিন পর নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে ৪০০ এমএল বা ৪৫০ এমএল রক্ত দান করে দিলে দেহ সুস্থ থাকে। অন্যদিকে দান করা রক্তে বেঁচে যায় মুমর্ূূর্ষু রোগী।’
তিনি আরো বলেন, ‘কক্সবাজার সদর হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র হচ্ছে জেলার একমাত্র রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র। হাসপাতালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কেন্দ্র চালু রয়েছে। এখানে ন্যূনতম ফি’তে রক্তদানের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই রক্ত পরিঞ্চালন করা হয়। কোনো পেশাদার রক্তাদাতার রক্ত নেয়া হয় না। কারণ পেশাদারদের অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে থাকে।’
পাঠকের মতামত: