ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ফিশিং বোটে নিহদের তিন যুবকের বাড়ি চকরিয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  কক্সবাজারের নাজিরারটেক এলাকায় ফিশিং বোট থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ জেলের লাশের মধ্যে চকরিয়ার তিন যুবক রয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্র দাবী করছে।

কিন্তু জেলে হিসেবে সাগরে গেলেও এই তিনজনের কেউ কখনো মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করার জন্য অতীতে সাগরে গিয়েছিল এমন তথ্য পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে নেই। ফলে তাদের সাগরে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজময় থেকে গেছে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিন উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের সাদেরঘোনা ও দক্ষিণ জঙ্গলকাটা এলাকায় গেলে তিন যুবকের পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে এসব তথ্যের সত্যতা মেলে।

এদিকে তিন যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারী। তবে নিহত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী তসলিমা সবার অগোচরে পিতার বাড়ি টেকনাফের হ্নীলা মৌলভীবাজার চলে গেছে বলে সাইফুলের মা জানিয়েছেন।

সাইফুলের মা সালেহা বেগম ও বোনেরা জানায়, সাইফুল (৩৫) কোনাখালীর বাংলা বাজার এলাকায় ৫/৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মৎস্য খামার গড়ে তোলে মাছ চাষ করতো। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানকার খামার ঘরে সে বসবাস করতো। একবছর আগে বিয়ে হলেও কোন সন্তান নেই।

গত ১৫ রমজান (৭ এপ্রিল) সাগরে যাওয়ার জন্য মহেশখালীর উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ৩ দিন পর জনৈক ব্যক্তি মোবাইলে সাইফুলের স্ত্রীকে মারা যাওয়ার খবর জানায়। এ খবর শুনে দুইদিন পরে সবার অগোচরে সাইফুলের স্ত্রী টেকনাফের হ্নীলা মৌলভীবাজার বাপের বাড়ি চলে গেছে।

সাদেরঘোনা থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে কোনাখালীর ৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ জঙ্গলকাটা গ্রাম। এই গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে শাহজাহান (৩৩) লোহাগাড়া উপজেলা এলাকায় শুটকি বিক্রি করে সংসার চালায় বলে পারিবারিক সূত্র দাবী করে। কিন্তু কখনো মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করেছে এমন তথ্য পরিবার ও এলাকাবাসী শুনেননি।

একইপাড়ার জসিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ তারেক মিয়া (২৩) পেশায় রাজমিস্ত্রী। এক সন্তানের জনক তারেক ট্রলারে জেলের কাজ করতো এবং সাগরে মাছ ধরতে অতীতে গিয়েছে এরকম তথ্য পরিবার ও এলাকাবাসীর জানা নেই। এসব পরিবার জানায়, অজ্ঞাত সূত্রে মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে গত ১৭ দিন যাবৎ কান্নাকাটি করতে গিয়ে তাদের চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে।

এদিকে এলাকা ঘুরে পাওয়া খোঁজখবর থেকে অনুমান করা যায়, তারা কখনো সাগরে মাছ ধরার জেলে ছিল না। ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ওই ট্রলারে গিয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের মতে, নিহত যুবকদের চালচলন সুবিধের ছিলনা। ফলে মহেশখালী এলাকায় এ সংক্রান্ত ছড়িয়ে পড়া তথ্য সত্য হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

উল্লেখ থাকে যে, এর আগে রবিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ফিশিং বোট থেকে ১০ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৯ এপ্রিল মহেশখালী এলাকার শামসুল আলমের মালিকানাধীন ফিশিং বোটের মাঝিমাল্লা খুনের শিকার হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। পরে গত ২৩ এপ্রিল উদ্ধার হওয়া ১০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসব জেলেকে ডাকাত সন্দেহে মেরে ফেলে অপর জেলেরা। পরে তাদের ওই বোটের হিমাগারে ঢুকিয়ে রেখে পাটাতনে পেরেক মেরে দিয়ে বোটটি পানিতে ডুবিয়ে দেয়। দীর্ঘ ১৫ দিন পর ফিশিং বোটটি সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে সাগরে ভাসতে দেখে অপর জেলেরা। কাছে গিয়ে পচাঁ দূর্গন্ধ পেয়ে বোটটি টেনে নাজিরারটেক এলাকায় নিয়ে আসে তারা। পরে প্রশাসনকে খবর দেয়া হয়।

থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে হিমাগারের পাটাতন ভেঙ্গে লাশগুলি উদ্ধার করে। লাশ পঁচে যাওয়ায় সনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে বলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান।

পাঠকের মতামত: