ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিনতাইকারীদের গডফাদাররা

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: কক্সবাজারে ছিনতাইকারী নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আইনশৃংখলা বাহিনী। তবে তাদের প্রকৃত গডফাদাররা সব সময় রয়ে যায় অধরা। ফলে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা ছিনতাই সহ নানান অপরাধ। রাজনৈতিক পরিচয় এবং কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় গডফাদারদের কারণেই শহরে নতুন নতুন ছিনতাইকারী তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তাই ছিনতাইকারীদের সাথে সম্পৃক্ত তাদের গডফাদারদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল।
কক্সবাজার পর্যটন শহর হওয়াতে সব সময় আলোচনায় থাকে ছিনতাই প্রসঙ্গ। প্রায় সময় খবরের শিরোনামও হয় ছিনতাই ঘটনা। গত বছর ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন পুলিশ সদস্য, আহত হয়েছেন বহু পর্যটক। সম্প্রতি ছিনতাইকারীদের আক্রমনে কলেজ ছাত্রের হাত পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনায় বেশ আলোচনায় আসে শহরে ছিনতাই ঘটনা। এতে নড়েচড়ে বসে আইন-শৃংখলা বাহিনী। চলতি সময়ে হার্ডলাইনে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধে ছিনতাইকারী নিহত এবং বহু ছিনতাইকারী আটক এবং এলাকাছাড়া হওয়ায় অনেকটা স্বস্তি এসেছে সাধারণ মানুষের মাঝে তবে তাদের গডফাদারদের কেউ আইনের আওতায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।
হোটেল ব্যবসায়ি শরাফত উল্লাহ বলেন, হোটেল মোটেল জোনকে ঘিরে বেশি সক্রিয় থাকে ছিনতাইকারীরা। আমার জানা মতে এখানে প্রতিটি সড়কে এলাকা ভিত্তিক ছিনতাইকারী আছে আর যাদের নিয়ন্ত্রন করে কয়েকজন গডফাদার। প্রত্যেকটি ছিনতাই বা অপরাধের পরে সেই সব গডফাদারদের আশ্রয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে সেখানে দিয়ে লুটের মাল ভাগবাটোয়ারা হয়। সত্যি কথা বলতে গেলে সে সব গডফাদারদের রয়েছে রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিচয় আছে তারা মূলত নিজেদের অপরাধ কর্মকান্ড এবং চাঁদাবাজি ধরে রাখতে ছিনতাইকারীদের লালন পালন করে।
এস.আলম বাস সার্ভিসের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, ভোর বেলা গাড়ী ধরার জন্য যাত্রীরা যখন শহরের লালদীঘির পাড়ে আসে সে সময় কিছু ছিনতাইকারী ঘুরাফেরা করে তারা সুযোগ পেলেই যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যাগ টাকা পয়সা ছিনতাই করে এবং প্রায় সময় পালংক্যি হোটেলের রোড দিয়ে দৌড় দেয় এবং নিদমহলের পাশের গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে বহুবার ছিনতাইকারীদের হাতেনাতে আটক করা হলেও তাদের জন্য তদবির করতে বা ছাড়িয়ে নিতে আসে কিছু স্থানীয় চিহ্নিত ব্যক্তি। এরাই মূলত এসব ছিনতাইকারীর গডফাদার।
লাইট হাউজ এলাকার ব্যবসায়ি নবিউল আলম বলেন, এখানে বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ আছে। যারা বিভিন্ন সময় সরকারি দলের মিটিং মিছিলের আগে থাকে। কারো খাস জমি দখল করা, দোকান থেকে চাঁদা নেওয়া এবং নালা দখল করে দোকান করা,রাস্তার উপর পানের দোকান করা এবং মাদক ব্যবসা পরিচালনা করাই এদের কাজ। সত্যি কথা বলতে তাদের পেছনে কিছু প্রভাবশালী সরাসরি জড়িত। আর কিছু আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে সখ্যতা তাই ছিনতাই সহ নানান অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন,ছিনতাই ঘটনার জন্য কক্সবাজারের বদনাম হচ্ছে এটা চরম সত্য। ছিনতাইকারী নিয়ন্ত্রনে প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান জোরদার করলেও সেখানে প্রকৃত ছিনতাইকারীরা ধরা পড়েনা। আর তাদের গডফাদাররাতো কখনোই ধরা পড়েনা ফলে নতুন ছিনতাইকারীর আমদানী হয়। আমি মনে করি প্রশাসনও জানে কারা আসল গডফাদার তাদের আইনের আওতায় আনা গেলে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রনেই আসবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, ছিনতাইকারী দমনে পুলিশ সর্বোচ্চ কাজ করছে একই সাথে তাদের নিয়ন্ত্রক বা গডফাদারদের সনাক্ত করা হয়েছে অনেকের নাম আমাদের কাছে আছে সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। সামনে আরো বড় পরিসরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: