নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) অংশীদার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য যৌথভাবে শুরু করলো দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও সম্পদ সৃষ্টি (ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন এন্ড এসেট ক্রিয়েশন) কার্যক্রমের তৃতীয় বছরের কার্যক্রম।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে কক্সবাজার অন্যতম। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের কারণে সৃষ্ট বন্যা, আকষ্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসের ঝুঁকিপূর্ণ একটি অঞ্চল। এই জেলায় ঝুঁকির মাত্রা বেশি ও এখানে প্রতি বছর দূর্যোগের কারণে অনেক গ্রাম, খামার ও জনগণের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৭ সাল থেকে বারবার ঘটতে থাকা এই দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় (এমওডিএমআর) ও জেলা প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে ডব্লিউএফপি।
কক্সবাজারে ডব্লিউএফপি’র সিনিয়র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলা ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি জরুরি অবস্থায় জীবন বাঁচানোর অন্যতম এক লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, কক্সবাজারের জনগণের জীবনে এই পুনসংস্কারের কাজগুলো টেকসই ও ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।”
দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের কাজগুলোর প্রথম ধাপে প্রাথমিকভাবে ২০১৯ ও ২০২০ সালজুড়ে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় ৭০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পুনঃসংস্কার করা হয়েছে।
২০২১ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় আরও ৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পুনসংস্কার করা হবে। পাশাপাশি, উখিয়া ও টেকনাফে ৭০টি গ্রামে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো যেন স্থানীয় জনগোষ্ঠী ব্যবহার করতে পারে, তার ব্যবস্থার উন্নয়ন, চকরিয়া, রামু, টেকনাফ ও উখিয়ার কৃষিজ অবকাঠামো পুনসংস্কার, উখিয়া টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদর এলাকায় পুনবনায়ন ও কক্সবাজার সদরে ডিজিটাল বিলবোর্ডে কোভিড-১৯ ও অন্যান্য ঝুঁকি-বিষয়ক তথ্য প্রদর্শন করা হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর যৌথ অনুষ্ঠানে উপিস্থিতির একাংশ।
এই কার্যক্রমের ফলে এই এলাকাগুলোতে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। ডব্লিউএফপি’র ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন/এসেট ক্রিয়েশন-এর আওতায় যে স্থাপনাগুলো পুনসংস্কার করা হয়েছে, তার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও তার প্রস্তুতির জন্য স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কক্সবাজার জেলায় ৬ মাসব্যাপী এই পুনসংস্কার কর্মকাণ্ডের ফলে অস্থায়ীভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সভায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, “ডব্লিউএফপি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কেএস রিলিফ ও অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ও কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতিকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য অবকাঠামোর পাশাপাশি সাইক্লোন শেল্টার, উন্নত যোগাযোগ সুবিধা ও পুনসংস্কারকৃত কৃষিজ অবকাঠামো বিশেষ করে, অতি বৃষ্টি ও বন্যার সময় এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা তৈরি করবে।”
এ ছাড়াও, ডব্লিউএফপির লক্ষ্য হলো পুনসংস্কারকৃত অবকাঠামোগুলোকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করা ও ৩০টি সাইক্লোন শেল্টারে সোলার প্যানেল যুক্ত করা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা এবং ইতোমধ্যে সংস্কারকৃত ১০০টি সাইক্লোন শেল্টার, যা স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে ইমার্জেন্সি কিট-এর ব্যবস্থা করা।
এফএও, আইওএম ও ইউএনএইচসিআর-এর মতো জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও সুশীল সমাজের অংশীদারগণও এই ধরনের কার্যক্রম ও দক্ষতা সৃষ্টি-বিষয়ক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, যেন আরও মানুষ এইধরনের কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করতে পারে।
পাঠকের মতামত: