ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে টমেটোর দাম নিয়ে দিশেহারা কৃষক

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: কক্সবাজারে শীতকালীন সবজির বাজারে ধস নেমেছে। প্রায় প্রতিদিনই কমছে সবজির দাম। আর এতে করে উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকদের। অতি কষ্টে উৎপাদন করা এসব সবজির দাম কৃষকরা ভোগ করতে না পেলেও কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে এই সবজি সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে তিনগুণ দামে।

শুধু তাই নয়, টমেটোর দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় বাম্পার ফলনের আনন্দ বেদনায় রূপ নিয়েছে কক্সবাজার জেলার প্রায় দেড় হাজার চাষির। বর্তমানে চাষিরা প্রতি কেজি টমেটো খেত থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন ১০ টাকায়।

জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, রামু, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৩শ একর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে টমেটোর ফলন বাম্পার হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি অর্জিত হয়েছে।

সদর-রামুর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কিছু কিছু মাঠে এখন ধানের চারা লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষণাগার না থাকায় খেত থেকেই চাষিরা টমেটো কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে বাম্পার ফলন হলেও কম দাম পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে টমেটো চাষ করে লসে পড়তে হচ্ছে চাষিদের।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় থেকে দু’মাস ধরে জমি থেকে টমেটোর তোলা শুরু হয়েছে। প্রথম সপ্তাহে দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে পাওয়ায় খুশি ছিল চাষিরা। কিন্তু পরের কয়েক সপ্তাহে ৩০ টাকা, এরপর ২০ টাকায় নেমে আসে। বর্তমানে টমেটোর দাম ১০ টাকা ও উন্নতমানের টমেটো সর্বোচ্চ ১৫ টাকায় নেমে গেছে। চাষিরা নামমাত্র মূল্যে টমেটো বিক্রি করছেন। এতে টমেটো বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।

সদর উপজেলার পিএমখালী পাতলী এলাকার চাষী বশির আহাম্মদ বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাত্র কয়েক দিন টমেটোর দাম ভালো পেয়েছি। বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি টমেটো ২০-২৫ টাকা দামে বিক্রি হলেও চাষীরা সে দাম পাচ্ছেন না। চাষীরা আড়তদারদের কাছে কেজি প্রতি মাত্র ১০ টাকা দামে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ জমি থেকে টমেটো তোলার জন্য শ্রমিককে টাকা আরও বেশি দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। কোনো কৃষকই এবার উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন না। ফলে টমেটো চাষীরা আমার মতো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

রামু উপজেলার কৃষক আতাউল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার খেত থেকে ৮ টাকা করে টমেটো বিক্রি করেছি। ধান লাগাইতে টাকা লাগবো, তাই কম দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।

একই উপজেলার দ্বীপ ফতেঁখারকুল গ্রামের আবছার মিয়া জানান, টমেটো চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু ভালো দাম পাচ্ছি না। কিস্তিতে টাকা তুলে অন্যের দেড় বিঘা জমি ধার নিয়ে টমেটো চাষ করেছি। টমেটো ভালো হয়েছিল। কিন্তু টমেটোর দাম খুবই কম। মনে হচ্ছে টমেটো বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। বড়ই চিন্তায় আছি।

কলঘর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, প্রায় গত দেড় মাস আগে পাইকারদের থেকে ৩৫-৪০ টাকা করে টমেটো কিনতে হতো। আর খরচ বাদ দিয়ে খুচরা বিক্রি করতাম ৪৫-৫০ টাকায়। আর এখন ১০-১৫ টাকায় কিনে বিক্রি করছি ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আগের চেয়ে টমেটোর দাম অনেক কমে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, চলতি বছর পর্যাপ্ত সার ও অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে না। আমাদের পরামর্শ হল, যদি স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষনাগার করা যায়, অথবা চাষিদের সংরক্ষণ প্রযুক্তিটা বুঝাতে পারা যায় বা সংরক্ষণ করে কিছুদিন পরে বিক্রি করতে পারলে চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত কোনো আগ্রহী ব্যক্তি টমেটো প্রসেসিং করার জন্য যদি বিভিন্ন খাবার তৈরি করার জন্য এগিয়ে আসেন, তবে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: