আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে আবার সামরিক অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
অভিযানের মুখে শত শত রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কিছু জানানো না হলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এসেছে।
তথাকথিত মুসলিম বিদ্রোহী ও জঙ্গি তৎপরতা নির্মূলের নামে এ অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার থেকে পশ্চিম রাখাইনে সেনাবাহিনীর ৩৩তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন মোতায়েন শুরু হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকা সত্ত্বেও হেলিকপ্টারে করে সেনাদের আঞ্চলিক রাজধানী সিত্তইয়ে আনা হচ্ছে এবং সেখানে থেকে তাদের মংডুতে মোতায়েন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকেই ওই অঞ্চলে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে সেনারা।
সংবাদমাধ্যম সাউথ এশিয়ান মনিটরের অনলাইন সংস্করণে বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা তাতমাদাও রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের গ্রামবাসীদের নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন উত্তরের মায়ু পার্বত্য এলাকা এড়িয়ে চলে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সেখানে তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে।
তাতমাদাও বিশ্বাস করে, উত্তরের মায়ু পার্বত্য এলাকায় আস্তানা তৈরি করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গিরা। এই এলাকার আশপাশে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে অভিযান চালাচ্ছে তারা। এখন এই অভিযানে আরো ৫০০ সেনা যোগ দিয়ে অভিযানের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
সপ্তাহজুড়ে রাখাইনের শহরাঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং এর আওতা বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে কারফিউ কার্যকর হয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমেও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর অভিযানের স্বার্থে যেসব এলাকায় প্রয়োজন, সেসব স্থানে নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এমন সময় নতুন সামরিক অভিযান শুরু করল মিয়ানমার যখন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন ও বসতবাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক তদন্তের চাপের মুখে রয়েছে নেইপিদো। জাতিসংঘসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো বর্বর অভিযানের নিন্দা করছে এবং এ কারণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমার।
গত বছর সীমান্ত পোস্টে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হামলায় মিয়ানমারের নয়জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্বিচার অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। ভয়াবহ সহিংসতা চলতে থাকায় সেই থেকে এ পর্যন্ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।
সম্প্রতি রাখাইনে আবারো সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহ বা তার কিছু আগে মাংডুতে সংখ্যালঘু ছয় ম্রো আদিবাসী হত্যার শিকার হওয়ার পর এ সহিংসতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে মায়ু পার্বত্য এলাকা। গত জুন মাসে সেনাবাহিনী দাবি করে, দুই দিনের অভিযানে তিন জঙ্গিকে হত্যা করেছে তারা। কয়েকটি এশীয় গোয়েন্দা সূত্র মনে করে, মায়ু পার্বত্য এলাকায় বিদেশি অর্থসহায়তায় প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা মুসলিম সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি নামে একটি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ এনে মায়ু পার্বত্য এলাকায় সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে গত বছর অক্টোবর মাসে সীমান্ত পোস্টে হামলার দায় স্বীকারের আগে এই বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নাম সেভাবে শোনা যায়নি। তাদের দাবি, রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে এবং একইসঙ্গে বেসামরিক লোকদের হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে তারা।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করলেও হাতেনাতে তার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি মিয়ানমার। গায়ের জোরে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে তারা। কিন্তু রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু ৭০০ বছর ধরে রাখাইন রাজ্যে তারা বসবাস করছে। এখন নিজভূমে পরবাসীর মতো বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী গণতন্ত্রকামী হিসেবে বিশ্বপরিচিত অং সান সু চি। তার নেতৃত্বাধীন সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন। এ ইস্যুতে তিনি যেটুকু কথা বলেছেন, তা আবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাওয়ার শামিল। রোহিঙ্গা নির্যাতনের আন্তর্জাতিক অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি নতুন করে সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে এখনো তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হয়নি।
পাঠকের মতামত: