ঢাকা,বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের মাহবুবুর মেয়র নির্বাচিত

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। পৌরসভার ৪৩টি ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে মাশেদুল হক রাশেদ পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬৯৯ ভোট।

কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত মাহবুবুর রহমান চৌধুরী সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও তিনবারের নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে তিনি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।

বিদ্রোহী প্রার্থী রাশেদ জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে গত ২৬ মে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বাবা মরহুম একেএম মোজাম্মেল হক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কক্সবাজার পৌরসভার ২ মেয়াদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

এছাড়া মেয়র পদে অন্য তিন প্রার্থী জগদীশ বড়ুয়া হেলমেট প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ১৬৮ ভোট, হাতপাখা প্রতীকের মো. জাহেদুর রহমান ১ হাজার ৪৫২ ও মোবাইল ফোন প্রতীকের জোসনা হক পেয়েছেন ৬৯৮ ভোট।

জোসনা হক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাশেদুল হক রাশেদের স্ত্রী।

জেলা নির্বাচন অফিস ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফলে এই তথ্য জানা গেছে।

এছাড়া পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ৪ নারী কাউন্সিলররা হচ্ছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে এসআইএম আকতার কামাল(পুনঃনির্বাচিত), ২ নম্বর ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান মিজান(পুনঃনির্বাচিত), ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমিনুল ইসলাম মুকুল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এহেসান উল্লাহ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাহাবুদ্দিন সিকদার(পুনঃনির্বাচিত), ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ওমর সিদ্দিক লালু(পুনঃনির্বাচিত), ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওসমান সরওয়ার টিপু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাজ বিহারি দাশ(পুনঃনির্বাচিত), ৯ নম্বর ওয়ার্ডে হেলাল উদ্দিন কবির(পুনঃনির্বাচিত), ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সালাহউদ্দিন সেতু(পুনঃনির্বাচিত), ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নুর মোহাম্মদ মাঝু(পুনঃনির্বাচিত) এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এম এ মনজুর(পুনঃনির্বাচিত)।

নির্বাচিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা হচ্ছেন ১ ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাহেনা আকতার পাখি(পুনঃনির্বাচিত) ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ইয়াসমিন আকতার, ৭ ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জাহেদা আকতার (পুনঃনির্বাচিত) ও ১০ ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নাসিমা আকতার বকুল(পুনঃনির্বাচিত)।

সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলে। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি ও ভোট কেন্দ্রের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। তবে দুপুরের পর থেকে ভোট কেন্দ্রের সামনে লাইন কমে আসলেও বিকাল থেকেই ফলাফলের অপেক্ষায় ফের জড়ো হতে থাকে ভোটাররা। ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থীদের সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করে।

পৌরসভা নির্বাচনে এই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে কোন কোন বুথে ভোট গ্রহণে জটিলতা দেখা দেয়। পরে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসে ইভিএম মেশিন ঠিক করে দিলে ভোট গ্রহণ স্বাভাবিক হয়।

দুপুরে এসএম পাড়া কেন্দ্রে একজন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোটারদের টাকা অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে হাতে নাতে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এ নির্বাচনে সব ক’টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর প্রশাসনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের অতিরিক্ত টহল রাখা হয়। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দলীয় কোন মেয়র প্রার্থী ছিল না। মূলত এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে বিদ্রোহীর।

গত ৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ১৬ মে মনোনয়নপত্র জমাদান, ১৮ মে বাছাই, ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন প্রার্থীরা। কক্সবাজার পৌরসভার মোট ভোটারসংখ্যা ৯৫ হাজার ৩৮৬।

কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান।

পাঠকের মতামত: