শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার :: কক্সবাজার জেলার শহরে এবং বিভিন্ন উপজেলায় এখনো বেপরোয়া বাইকের দৌরাত্ম কিছুতেই থামছেনা। একদিকে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর প্রচার, অন্যদিকে রাস্তায় বিনা হেলমেট যাত্রীদের জরিমানা অথবা বিনা কাগজে যাত্রীদের সাজা ও জরিমানা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি। এসব এত কিছু সত্ত্বেও বদলানো সম্ভব হচ্ছে না জেলার চেহারা।
সুযোগ পেলেই মানুষ ছুটছে নিয়ম ভেঙ্গে। কোথাও ভেঙ্গে চলছে ট্রাফিক নিয়ম, কোথাও বা অত্যধিক গতি। কক্সবাজার শহর এমনিতেই জনবহুল। চাহিদার তুলনায় বেশ ছোটো ছোটো রাস্তা, নেই ফুটপাথও। তারপর গতির বাঁধন না থাকলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
প্রতিদিন শহর এবং শহরের বাহিরে বেরুলেই দেখা যায় উঠতি বয়সের ছেলেরা বেপরোয়া গতিতে বিভিন্ন কোম্পানীর উন্নত মডেলের মোটর সাইকেল চালিয়ে থাকেন। এদের বেশিরভাগই ১২-১৩ বছর হতে শুরু করে ১৭-১৮ বছর বয়সী। শহর এবং শহরের বাহিরে ওই সব চালকরা যেকোনো রাস্তায় মোটর সাইকেল বেপরোয়া গতিতে ও প্রচন্ড শব্দ করে চালিয়ে বেড়ায়। তাদের এমন বেপরোয়া গাড়ি চালনায় আতংকিত হয়ে পথ চলতে হয়।
এই দুর্ভোগের পাশাপাশি কক্সবাজারে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মোটর সাইকেল। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে অনেকটা বেপরোয়া গতিতে চলছেন এ তরুন মোটর সাইকেল চালকরা। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি তো দুরের কথা, অধিকাংশ সড়কের ফুটপাতে মোটর সাইকেল চালানো যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিরক্ত পথচারী। শুধু তাই নয়, ফুটপাতে মোটর বাইক চলাচল করায় প্রায়ই ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।
সচেতন মহলের অভিমত, এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণরা এমন ভাবে গাড়ি চালায় তাদের গাড়ির শব্দ এবং দ্রুতগতির বেপরোয়া চালানো দেখে অনেকেই হতবাক না হয়ে পারছে না। শহরে বেরুলে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও যানযট লেগে থাকে। তারা সেই যানজটের ভেতর দিয়েও ট্রাফিক নিয়ম না মেনে বেপরোয়া ভাবে মটর সাইকেল চালিয়ে থাকেন। তাদের কারণে রাস্তায় আরো বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক, যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্ক চালকদের অধিকাংশ মোটর সাইকেলই লাইন্সেস বিহীন বলে জানিয়েছেন একটি মহল। তাদের প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র নেই। এবভাবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ও অপরাধমুলক কর্মকান্ডের জন্য অভিভাবকদেরই দায়ী করছেন সচেতন মহল। এ সব অবৈধ মোটর সাইকেল চালিয়ে তারা নির্জন স্থানে গিয়ে মাদকসেবন, চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধমুলক কাজ করে থাকে বলে জানা যায়।
বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর কারণে দিন দিনই দুঘর্টনা বাড়ছে। গত দু’তিন মাসে প্রায় ৫০-৬০ জন মোটর সাইকেল আরোহী সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিনই হাসপাতালে গিয়ে সড়ক দুঘর্টনার কোনো না কোনো মোটর সাইকেল আরোহীর গুরুতর আহত হওয়ার খবর জানা যায়।
তাই এ সকল তরুণদের বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো রোধ করতে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অর্থদণ্ড দিলে, এসব যুবকরা কিছুটা সতর্ক হবে বলে মনে করছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল বণিক বলেন, সড়কে নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেল বড় হুমকি। মানুষ দ্রুত তার গন্তব্যে যেতে চায়। এ কারণেই জেলার সর্বত্রে গতিহীন সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হলে মোটরসাইকেল নিয়ে এত দুর্ভাবনার কারণ হতো না।
তিনি আরোও বলেন, মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা তুলনামূলক কম। তারা সুযোগ পেলেই আইন ভেঙে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। যারা আইন ভঙ্গ করেন তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। জনগণকে সচেতন করতেও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
পাঠকের মতামত: