ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে সার্বিক প্রস্তুতি

কক্সবাজার ১ আসন, ১৫৮টির মধ্যে চকরিয়ায় ৯৬টি ও পেকুয়ায় ২২টি ভোট কেন্দ্রকে অতি ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত

মাঠে থাকবেন ১২ জন ম্যাজিষ্ট্রেট
আইনশৃংখলা বাহিনীর ২৫৪২ সদস্য

৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মুলত ভোটযুদ্ধ হবে সৈয়দ ইবরাহিম ও জাফর আলমের মধ্যে

মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪১৯ নারী পুরুষ

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার ১ (চকরিয়া পেকুয়া) আসনের ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান এর নির্দেশে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার ১৫৮টি ভোট কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.ফখরুল ইসলাম এবং পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী।

অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার ১১৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টি ভোট কেন্দ্রকে অতি ঝুকিপূর্ণ ও ১৮ টি কেন্দ্রকে সাধারণ এবং পেকুয়া উপজেলার ৪৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২২ টি অতি ঝুকিপূর্ণ ও অপর ২২ টি সাধারণ ভোট কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর। আর এসব অতি ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনের পক্ষথেকে বাড়তি নজরদারি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।

দায়িত্বপ্রাপ্ত চকরিয়া উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.ফখরুল ইসলাম বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত কল্পে চকরিয়া উপজেলার ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৭৭৩ জন সদস্য কাজ করবেন। তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনী সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় তদারকিতে থাকছেন ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। পাশাপাশি চকরিয়া উপজেলার ভোট কেন্দ্রগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনার মাধ্যমে অপরাধমুলক বিঘ্ন ঘটালে তাৎক্ষণিক জেল জরিমানা প্রদানে নিয়োজিত থাকবেন দুইজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের দিন চকরিয়া উপজেলার ১১৪ ভোট কেন্দ্রে ১০৭ জন, পেকুয়া উপজেলার ৪৪ ভোট কেন্দ্রে ৬৫ জন সেনা বাহিনীর সদস্য কাজ করবেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন চকরিয়ায় ১০ প্লাটুন (২০০ জন) ও পেকুয়ায় ৭ প্লাটুন (১৪০ জন) বিজিবি সদস্য। একইসঙ্গে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় থাকবে র্যাবের দুইটি করে চারটি প্রেট্টোল টিম। পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন।

চকরিয়া উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা তাহেরা বেগম বলেন, একটি ভোট কেন্দ্রে ১২ জন আনসার সদস্ দায়িত্ব পালন করবেন। তৎমধ্যে দুইজন আনসার অস্ত্রধারীসহ ৮ জন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য ভোট গ্রহণে সহযোগিতা করবেন। চকরিয়ার ১১৪ ভোট কেন্দ্র মোট ১৩৬৮ জন নারী পুরুষ আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, একইভাবে পেকুয়া উপজেলার ৪৪ ভোট কেন্দ্রে আনসার বাহিনীর ৫২৮ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইরফান উদ্দিন বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার ১ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১৫৮টি। তৎমধ্যে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ১১৪টি ও পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চকরিয়ায় ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৪৯টি ও পেকুয়া উপজেলায় ২৯৪টি।
মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪১৯ জন। তৎমধ্যে চকরিয়া উপজেলার মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ জন ও পেকুয়া উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ জন।
তিনি বলেন, নির্বাচনে মোট ১৪৪ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে নিয়োজিত থাকবেন ১৫৮ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ১০৪১ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ২০৮২ জন পোলিং অফিসার।

পেকুয়া উপজেলা উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি, ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি। পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, সব কটি ভোটকেন্দ্রকে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরে রেখেছে। তিনি বলেন, ৪৪ ভোট কেন্দ্রে একজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, তিনজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর তত্তাবধানে সেনা বাহিনী, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে পুলিশের ৫টি মোবাইল টিম ও একটি স্টাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবেন।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, চকরিয়া উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অধিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যাতে ভোটাররা নিবিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে। তিনি বলেন, চকরিয়া উপজেলার ১১৪ কেন্দ্রে পুলিশের ১২টি মোবাইল টিম ও একটি স্টাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার ১ (চকরিয়া পেকুয়া) আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাংলাদেশ কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.)সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক (হাতঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি জাফর আলম (ট্রাক), জাতীয় পাটির এরশাদ সমর্থিত হোসনে আরা আরজু (লাঙ্গল), ওয়ার্কাস পাটির মনোনীত হাজি আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), ইসলামি ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ছিদ্দিকী ( মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী কমেডিয়ান কমরউদ্দিন আরমান ( কলারছড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন (ঈগল)।

নির্বাচনে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও
মুলত এখানে ভোটের লড়াই হবে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে। তারা হলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি পদপ্রার্থী বাংলাদেশ কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক (হাতঘড়ি) ও স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতি দেওয়া সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম (ট্রাক গাড়ি)।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠে দুই প্রার্থী প্রচার প্রচারণায় তাড নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন। এইক্ষেত্রে সৈয়দ ইবরাহিম ভোটারদের কাছে একটি বার্তা দিয়েছেন ৭ জানুয়ারি আপনার ভোট হাতঘড়ি মার্কায় দিন। বিনিময়ে সন্ত্রাস, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি মুক্ত চকরিয়া পেকুয়া উপহার দেব। অপরদিকে বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম বলছেন, অন্য প্রার্থীর বাড়ি হাটহাজারী। আমি আপনাদের ঘরের ছেলে। বিপদে আপদে আমাকে কাছে পাবেন। তাই ট্রাক গাড়িতে ভোট দিয়ে ঘরের ছেলেকে বিজয়ী করুন।

পাঠকের মতামত: