বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: কক্সবাজার সৈকতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা বিপুল পরিমাণ বর্জ্য এখনো রয়ে গেছে। শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী সায়মান বিচ পয়েন্ট, দরিয়া নগর ও হিমছড়ি পর্যন্ত সৈকতের অন্তত ছয় কিলোমিটার বালুচরজুড়ে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তিন দিন ধরে স্থানীয়রা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সৈকতের বালুতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য যেমন চাপা পড়ছে, তেমনই জোয়ার-ভাটায় বিপুল বর্জ্য সাগরে নামছে, আটকা পড়ছে চরেও।
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা বর্জ্যের কারণে সাগর তীরবর্তী এলাকায় পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জেলা প্রশাসন বর্জ্য সংগ্রহে নামলেও বৃষ্টির কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।
সমুদ্রসৈকতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহিদ খান জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ চলছে। সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট থেকে শুরু করে দরিয়ানগর ও হিমছড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সোমবার থেকে এসব বর্জ্য অপসারণ শুরু হয়।
সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্মী, কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এবং লাকড়ি কুড়িয়ে লোকজন স্বেচ্ছায় বালুচর থেকে বস্তা ভর্তি করে বর্জ্য নিজেদের প্রয়োজনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আজ বুধবার থেকে বৃহত্ পরিসরে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে এই অপসারণ কাজ চলবে।
সৈকতের বর্জ্য অপসারণসংক্রান্ত একটি সভা গতকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাগর তীরের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে আজ বুধবার থেকে বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে বর্জ্য অপসারণ করা হবে।
ভেসে আসা বর্জ্যের মধ্যে আছে মদের বোতল, মাছ রাখার ঝুড়ি, জাল, ছোট ছোট বয়া, লাইট, কাঠ, বাঁশ, স্যান্ডেল, বেভারেজের বোতল, পলিথিন প্রভৃতি। গতকাল পর্যন্ত এসব বর্জ্যের উত্সস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
কয়েকজন জেলেকে উদ্ধৃত করে কক্সবাজার সামুদ্রিক মত্স্য গবেষণা কেন্দ্রের (এফআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুর রহমান চকরিয়া নিউজকে জানান, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে দক্ষিণে দূরবর্তী একটি স্থানে বর্জ্যের ভাগাড় আছে। এর ওপর ভিত্তি করে বাস্তুসংস্থান গড়ে উঠেছে, যেখানে পাখি বাসা বাঁধে, সাপ বিচরণ করে; আবাস আছে সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপসহ নানা প্রাণীর। বর্ষায় সেখানকার বর্জ্য ভেসে সৈকতে এসে থাকতে পারে।
অবশ্য আরেক দল জেলে ধারণা করছেন, বিদেশি কোনো জাহাজ এসব বর্জ্য ফেলে পালিয়ে গেছে। সাধারণত সাগরে জেলেদের বিচরণ বন্ধ থাকার সুযোগে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। গত ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ সুযোগে বিদেশি চোরাকারবারিরা এ কাণ্ড ঘটাতে পারে।
পাঠকের মতামত: