শাহেদ মিজান, কক্সবাজার ::
বহুল আলোচিত কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল ৩১ মার্চ রোববার। পঞ্চম উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপ এবং কক্সবাজার জেলার জন্য শেষ ধাপে একমাত্র কক্সবাজার সদর উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জেলার একমাত্র উপজেলা হিসেবে এখানে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের বিধি মতে প্রার্থীরা গতকাল রাতেই সকল ধরণের প্রচার-প্রচারণা শেষ করে ভোটের দিনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আরো ছয় উপজেলার সাথে তৃতীয় গত ২৪ মার্চ কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন ধার্য্য ছিলো। সেই বারে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলো মাত্র দুই জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল এবং স্বতন্ত্র সেলিম আকবর। কিন্তু ‘অজ্ঞাত’ কারণে নির্বাচন এই উপজেলার নির্বাচন পিছিয়ে দেয়। একই সাথে নতুন করে মনোনয়নপত্র জমাদানের সুযোগ দেয়। এতে মনোনয়নপত্র জমাদানের হিড়িক পড়ে। একে একে আটজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নামেন পাঁচজন। তারা হলেন- তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের কায়সারুল হক জুয়েল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের সেলিম আকবর, ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আবছার, লাঙ্গল প্রতীকের অধ্যাপক আতিকুর রহমান ও মটর সাইকেল প্রতীকের আবদুল্লাহ আল মোর্শেদ (তারেক বিন মোকতার)। কিন্তু এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল মোর্শেদ (তারেক বিন মোকতার) ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং জাপা প্রার্থী অধ্যাপক আতিকুর রহমান ভোটের মাঠে নেই। তবে শেষ মুর্হর্তে তীব্র লড়াইয়ে রয়েছেন তিন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের কায়সারুল হক জুয়েল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের সেলিম আকবর, ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আবছার।
অন্যদিকে ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন আট প্রার্থী। তারা হলেন- আমজাদ হোসেন ছোটন রাজা (টিউবওয়েল), আবদুর রহমান (পালকি), মোর্শেদ হোসাইন তানিম (উডোজাহাজ), হাসান মুরাদ আনাচ (টিয়াপাখি), কাইয়ুম উদ্দিন (চশমা), কাজী রাশেল আহমেদ নোবেল (গ্যাস সিলিন্ডার), বাবুল কান্তি দে (মাইক) ও রশিদ মিয়া (বই)। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান হেলেনাজ তাহেরা এবং আয়েশা সিরাজ।
নির্বাচন কার্যালয়ে তথ্য মতে, কক্সবাজার সদর উপজেলায় মোট ১০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌসভায় মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০৮ টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৫২০ টি। ভোটার রয়েছে মোট ২৫৬৬৪৪ জন। তারমধ্যে পুরূষ ভোটার ১৩৫৪৪২ জন এবং মহিলা ভোটার ১২১২০২ জন। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের জন্য একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১২ জন অতিরিক্ত প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা জানান-সদর উপজেলায় মোট ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বপালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাসকে সদর উপজেলা নির্বাচনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি শুক্রবার ২৯ মার্চ সকাল থেকেই ২ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছে। তিনি নির্বাচনী অপরাধ ও অভিযোগ সমুহ আমলে নিয়ে দোষীদের জরিমানা, সতর্ক করা সহ বিভিন্ন বিচারিক কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরো জানান, নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিজিবি, র্যাব, আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। আজ শনিবার রাত থেকেই সদর উপজেলার সর্বত্র মোটর সাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল থেকে অত্যাবশ্যকীয় যানবাহন ছাড়া অন্য সকল প্রকার যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। আশেপাশের নৌ এলাকায় নৌযান চলাচলও বন্ধ রাখা হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বি কোন পক্ষকে বিন্দু পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ দেয়া হবে না। অত্যন্ত শান্তিপুর্ণ, ভীতিমুক্ত, নিরাপদ ভোটারবান্ধব পরিবেশে ভোট গ্রহন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা, সন্ত্রাস, পরিবেশকে অশান্ত করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
পাঠকের মতামত: