এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ॥
কক্সবাজার বিমানবন্দর জেনারেটর ক্রয়ে ৭০ লাখ টাকা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে ১৬ ফেব্রুয়ারী বদলি করা হয়েছে। বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) ডিভিশন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম কুর্মিটোলা ঢাকা) মিহির চাঁদের বিরুদ্ধে বিমান মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি একটি অভিযোগ করা হয়। অভিযোগটি তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিভিল এভিয়েশনকে নির্দেশ দেন বিমান মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, সিভিল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিভিল এভিয়েশনের ডিভিশন-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ কর্তৃক কক্সবাজার বিমান বন্দরে জেনারেটর ক্রয়ে ৭০ লাখ টাকার দুর্নীতির ঘটনাটি ধরা পড়ে। এছাড়া কক্সবাজার বিমান বন্দর সহ দেশের আরো বেশ কয়েকটি বিমান বন্দরের জন্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয়ের নামে বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি পর্যটনমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে। এই মিহির চাঁদকে প্রত্যাহারসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের একাধিক ঠিকাদার। এ সংক্রান্তে ঠিকাদাররা লিখিত একটি অভিযোগও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে দায়ের করেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গত বছর জুনের শুরুর দিকে কক্সবাজার বিমান বন্দরে ২৫০ কেভি জেনারেটর ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। দরদাতা হিসেবে ঢ্কাার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এএবি) ডিভিশন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) মিহির চাদ। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে জেনারেটরটি ক্রয় করে তা কক্সবাজার বিমান বন্দরে সরবরাহ না দিয়ে সমুদ অর্থ আত্মসাত করেন ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ও মিহির চাঁদ । এমনকি ওই সময় জেনারেটর ক্রয়ের বিপরীতে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকাও ছাড় দেয়া হয়। ঘটনাটি দীর্ঘদিন অপ্রকাশিত থাকেন।
অভিযোগে আরো প্রকাশ, এই মিহির চাঁদের অধীনে দেশের আরো ৯টি বিমান বন্দর রয়েছে। এসব বিমান বন্দরের জন্য সরকার অনুসৃত ইলেট্রনিক্স মালামাল আন্তর্জাতিক মানসম্মত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও তা না মেনে ন্মিনমানের দেশীয় মালামাল ক্রয় করেছে।এসব নিম্নমানের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী দিনদিন নষ্ট হচ্ছে। যে কোন সময় মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
উক্ত মিহির চাঁদ টেন্ডারের উল্লেখিত মানের বাধ্যবাধকতা না মেনেই তার পছন্দের নিদৃষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল ক্রয়ের জন্য ঠিকাদারদের বাধ্য করাসহ ক্রয়কৃত ইলেট্রনিক্স মালামাল ক্রয়ের শতকরা ১০ পার্সেন্ট মালামাল তার কাছে রেখে দেন। পরে ওই সব সরকারী মালামাল বাইরে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ ( ইলেকট্রনিক্স বিভাগ) শুধু দুর্নীতি অনিয়ম আর সরকারী অর্থ অপচয়ে জড়িত নয়,এই মিহির চাঁদ এতই বেপরোয়া যে তার আপন সহোদর প্রদীপকে ব্যক্তিগত সহকারী কাম ড্রাইভার কাম অবাস্তব ঠিকাদার বানিয়ে তার অধীনে থাকা অনান্য প্রকৌশলীদের চাপ সৃষ্টি করে প্রদীপকে ঠিকাদারি কাজ দেন।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিমান বন্দরে কাজ চলমান রয়েছে। ওই বিমান বন্দরগুলোর চলমান কাজ পরির্দনের কথা বলে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাছ থেকে আসা যাওয়ার বিমান টিকেট দাবী করে। অন্যায় আবদার না মেটালে ঠিকাদারদের হয়রানী করে এবং চলমান কাজ পরির্দশন না করেও টিএ ও ডিএ উত্তোলণ করে বলে অভিযাগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মোঃ আলমগীর হোসেন নামের এক ঠিকাদার বিষয়টি লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। এনিয়ে পুরো সিভিলএভিয়েশনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযোগটি তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিভিল এভিয়েশনকে নির্দেশ দেন বিমান মন্ত্রণালয়। অভিযোগ তদন্ত করে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ধরা পড়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদকে হয়রত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ( কুর্মিটোলা ঢাকা ) সহকারী পরিচালক (এমটি) হিসেবে বদলি করা হয়। বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অফিস আদেশনং-সিএএবি/প্রাঃ/১-পি(২৭),২০০৩, (অংশ-১) /৫৫১১,তাং১৫/০২/২০১্৬ইং। ১৬ ফেব্রুয়ারী অপরাহ্নের মধ্যেই কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়।
অপরদিকে, দুর্নীতিবাজ মিহির চাঁদের স্ত্রী বেবী রাণী কর্মকার ( বর্তমানে জাপান দুতাবাসে কর্মরত) স্বামীর বদলি ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে তদবির করছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।একই সাথে সদর দপ্তরের প্রকৌশলী বিভাগ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাকারিয়া হোসেনকে ই/এম বিভাগ-৩ কুর্মিটোলা ঢাকায় পদায়ন করা হয়েছে। মিহির চাঁদের বদলির ঘটনাটি বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক প্রশাসন ক্যাপ্টেন (অবঃ) ইকরাম উল্লাহ সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পাঠকের মতামত: