ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার বিচ পার্কের জমিতে ১০ তলা সার্কিট হাউস!

প্রকল্প অনুমোদন, জেলা পরিষদ ও কউকের আপত্তি উপেক্ষা

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ;; কক্সবাজার শহরের জনপ্রিয় সৈকত লাবণী পয়েন্টে অবস্থিত জেলা পরিষদের কর্তৃত্বাধীন ‘বিচ পার্ক’ এর জমিতে ১০ তলা বিশিষ্ট সার্কিট হাউস নির্মাণ করতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই স্থানে সার্কিট হাউস নির্মাণের উদ্যোগে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে জেলা পরিষদ ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। বিকল্প স্থানে নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ১০ তলা নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের অনুমোদন গত ৬ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নায়লা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে দেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন আগে জেলা পরিষদের শিশু পার্কের সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শতাধিক দোকান বিশিষ্ট ঝিনুক মার্কেট, মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী বসতি সরিয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছিল বিচ পার্ক নামের একটি পার্ক। জেলা পরিষদের কর্তৃত্বাধীন এ জমিতে একটি শিশু পার্ক নির্মাণের প্রস্তাবও দিয়েছিল তারা। তবে জেলা প্রশাসন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সেখানে কীভাবে তারা (জেলা পরিষদ) শিশুপার্ক করবে? এটা তো তাদের জায়গা না। খাস খতিয়ানমূলে এই জায়গা জেলা প্রশাসনের। তিনি বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত দিলে সেখানে সার্কিট হাউজ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
জানা যায়, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের তরফ থেকে প্রথম এই প্রস্তাবনা আসে। সেই সময় লাবণী পয়েন্টে সার্কিট হাউস নির্মাণ করা সমীচীন হবে না বলে মতামত দিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। ফলে তখনই উদ্যোগটি থেমে যায়। কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি পত্র আসার পর এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সৈকতের পার্ক প্রকল্প বাতিল করে সার্কিট হাউস নির্মাণের উদ্যোগকে সমর্থন করেন না কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, লাবণী সৈকতে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন উদ্যানটিতে পর্যটক এবং স্থানীয় শিশু-কিশোরদের জন্য একটি মিনি শিশু পার্ক করার প্রস্তাবনা আমরা বহুদিন আগেই দিয়েছিলাম। সেখানে আরেকটি অংশে থাকবে স্বাস্থ্যকর উদ্যান।
তিনি আরো বলেন, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে লাবণী সৈকতে ১০ তলা সার্কিট হাউস নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নয় বলে জানিয়েছিলাম। বরং সেটা অন্য কোনো স্থানে নির্মাণ করে লাবণী সৈকত এবং সংলগ্ন স্থান উন্মুক্ত রাখা সমীচীন হবে বলে পরামর্শ দিই।
কক্সবাজার সৈকতের বিচ পার্কের জমিতে ১০ তলা সার্কিট হাউজ নির্মাণের বিরোধিতা করে স্থানীয় নাগরিক সমাজও। এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে ব্যবসায়ী গোপাল দাশ বলেন, কক্সবাজার শেষ করার আর বাকি রইল কি? একসময় উন্মুক্ত সৈকত পর্যটকদের মন জুড়াত। কিন্তু বিভিন্ন স্থাপনা, ঝুপড়ি দোকান ও সাগরের ভাঙনে উন্মুক্ত সৈকতের পরিধি দিন দিন কমে আসছে। সেখানে এসব স্থাপনা হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা বেঁচে থাকতে নিজ শহরে এমন ক্ষতির কাজ কাউকে করতে দিতে পারি না।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ চকরিয়া নিউজকে বলেন, পরিকল্পিত কক্সবাজার হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু কেউ তা বাস্তবায়ন করছে না। যেহেতু এটা পর্যটন শহর, এখন থেকে পরিকল্পনার বাইরে কিছু করতে দেওয়া হবে না।
কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমরা এমন স্থাপনা চাই না। বিচ থেকে ৩ কিলোমিটার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। সেখানে কোনো স্থাপনা আমরা কক্সবাজারবাসী মানি না। তিনি বলেন, পর্যটনের অনেক জায়গা বেহাত হয়েছে। এখন আর না।

পাঠকের মতামত: