বার্তা পরিবেশক ::
“রোহিঙ্গা সংকটের কারণে মহাসংকটে শুধু কক্সবাজারই নয়, সমগ্র বাংলাদেশই মহা সংকটে। এই সংকট থেকে পরিত্রানের জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারকে সচেতন করতে হবে ট্রাস্ক ফোর্স এর মাধ্যমে এই সংকটকে অংকিত করে আন্তর্জাতিক মহলকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। “ – রোহিঙ্গা সমস্যাঃ মহাসংকটে কক্সবাজার শীর্ষক আলোচনায় আজ এভাবেই নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করে বিশিষ্ট আলোচকবৃন্দ। অপরদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রাণবন্ত এই আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান , নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) রুহুল আলম চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান , বাঙালি জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন, উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট ডঃ কাজী আকতার হামিদ, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, কক্সবাজার ফোরামের আহবায়ক ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ, সদস্য সচিব সুজন শর্মা সহ সহ ভুক্তভোগী স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান রোহিঙ্গা সমস্যার বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রকাশের পরামর্শ দেন। এতে রোহিংগাদের বিলম্বিত প্রত্যাবর্তন, আশ্রয়দাতাদের সমস্যা ও বহুমাত্রিক নিরাপত্তা সংকটের চিত্র অংকিত হবে। তিনি আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) কে রোহিঙ্গা গণহত্যা তুলে ধরার উপরও গুরুত্ব দেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে প্রসারিত করে বহুপাক্ষিক আলোচনার উপর নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে একইসংগে ক্যাম্প নিরাপত্তার উপর নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) রুহুল আলম চৌধুরী বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই সমস্যার কারণে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বহিরাগত নিরাপত্তার ফাঁক ফুকর চিহ্নিত করে নিরাপত্তা সংকটকে চিহ্নিত করে সমাধানের পরামর্শ দেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ডঃ মিজানুর রহমান বলেন, মহাসংকটে শুধু কক্সবাজার নয়- মহাসংকটে আছে সমগ্র বাংলাদেশ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে কক্সবাজার আসলেই বাজারে পরিণত হয়েছে। হারিয়েছে আগের সেই ছিমছাম ইমেজ। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা জোর দেওয়ার পাশাপাশি আলোচনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন।
বাংগালি জাতিসত্বার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা রোহিঙ্গার ইতিহাসকে কবিতার ছন্দে তুলে ধরেন। তিনি সমস্যা উত্তরণে পৃথিবীর সব দেশকে শরনার্থী ভাগ করে নিতে অথবা স্বায়ত্বশাসিত সেইফ জোনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসিত করার পরামর্শ দেন।
পরিবেশবিজ্ঞানী ডঃ আনসারুল করিম রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে এ থেকে নিরুপণের জন্য ট্রাস্ক ফোর্স গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এই ট্রাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে মানুষকে সংগঠিত করে সরকারকে সচেতন করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব।
সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন এ ধরণের আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কক্সবাজার ফোরামকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোরামকে অরাজনৈতিক ও ন্যায্য দাবি তুলে ধরার অবস্থান ধরে রাখার অনুরোধ জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, পরিবেশ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে কক্সবাজারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ডঃ আকতার হামিদ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন আইনগত পন্থা ব্যাখ্যা করে দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন।
উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, “এই সংকটের কারণে ধর্ষিতা নারীর মত বীভৎস বর্তমানের কক্সবাজার”। তিনি বলেন, একদিকে রোহিংগাদের জামাই আদরে রাখা হয়েছে, অন্যদিকে স্থানীয়রা অর্থনৈতিক পীড়ার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মাদকের আগ্রাসনে রোহিংগারাই প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে এই সমস্যা উত্তরণে ভু-রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবকে তিনি দায়ী করেন।
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী তার আলোচনায় রোহিঙ্গারা সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের থেকে পৃথকীকরণের দাবি জানান। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, অনেক জনপ্রতিনিধিও রোহিঙ্গা রয়েছেন। তিনি মংলোকে সেইফ জোন ঘোষণা করে রোহিংগাদের প্রত্যাবর্তনের পথ খুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনি বক্তব্যে আহবায়ক ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ও আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করে সরকারের উর্ধতন মহল ও আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন কক্সবাজার ফোরাম কক্সবাজারের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সোচ্চার থেকে কাজ করে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আলোচনার শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন ফোরামের সদস্য সচিব সুজন শর্মা। তার বক্তৃতায় কক্সবাজার ফোরামের উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি আশা প্রকাশ করেন রোহিঙ্গা সমস্যা যেভাবে বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করতে কাজ করে যাবে কক্সবাজার ফোরাম।
মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিমের উপস্থাপনায় এই আলোচনায় কক্সবাজার ফোরামের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও ঢাকাস্থ কক্সবাজারবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত: