ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতায় রাজার কুল রেঞ্জে চলছে হরিলুট!

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন রামু উপজেলা লাইসেন্সবিহীন অর্ধ শতাধিক স’মিলে দিবারাত্রি চেরাই হচ্ছে কোটি কোটি টাকার চোরাই কাঠ হলেও দেখার কেউ নেই।যে ভাবে পাহাড় ও বনের গাছ কাটা হচ্ছে তাতে অচিরেই এতদঞ্চলে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন পরিবেশ বিদগনেরা। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রতিটি স’মিল থেকে মাসিক ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা মাসোয়ারা দিয়ে এই অপকর্মটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

বন নীতিমালা অনুযায়ী বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে করাত কল (স’মিল) করার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নেই পরিবেশের ছাড়পত্র। বন বিভাগের কোন অনুমোদন। তারপরেও থেমে নেই দিবারাত্রি চোরাই কাঠ চেরাই প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মতে, এগুলো দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের। কিন্তু তারা অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ওভারলুক করে থাকেন। জানা যায় এতদ্বঞ্চলের শতাধিক স’মিল থেকে প্রতিমাসেই কোটি টাকার উপরে ঘুষ আদায় হয়। যা সংশ্লিষ্ট বিটের গার্ড থেকে শুরু করে ডিএফও পর্যন্ত পৌঁছায়। যে কারণে তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে আসছেন। এছাড়া পাহাড় দখলদাররা নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে এই বনবিভাগের হাজার হাজার একর পাহাড় সমতল ভুমিতে পরিণত করছে।

সরেজমিনে গিয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের রাজার কুল রেঞ্জে ৪ টি বিটের মধ্যে, পূর্ব রাজারকুল স’মিল, পশ্চিম রাজার কুল, শিকল ঘাট দারিয়ারদীঘি‌,বড় ঢেবা’চিতাখালি,বাইন্নার দোকান মতি ব্রিজ, মীরজা আলির দোকান,পশ্চিম মির্জাআলির দোকান সহ এমন চিত্র দেখা গেছে। জানা যায়,পাহাড় দখলদারদের তালিকায় ইয়াবা কারবারদের নামও রয়েছে। সেখানে সবুজ প্রাকৃতিক বিভিন্ন মূল্যবান গাছপালা এবং পাহাড় কেটে চাষের জমি করেছে।এভাবে পাহাড় কাটা, বনভূমি দখল করা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে পরিবেশ প্রেমিরা মনে করেন।এভাবে পাহাড় এবং বনের গাছ কাটলে খুব অচিরেই কক্সবাজারের বনভুমি ধ্বংস হবে করেন সচেতন মহলের ধারণা।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পাহাড় দখলের লীলাখেলায় মেতেছে ভূমিদস্যু চক্র। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের রামু বনবিভাগকে মাসোহারা দিয়ে চলছে শতাধিক অবৈধ স’মিল। এসব টাকা বন কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভাগীয় বনকর্মকর্তার পকেটেও যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে চিরাই হচ্ছে শত শত একর সামাজিক বনায়নের গাছ।এর মধ্যে
পূর্ব রাজারকুল স’মিল, পশ্চিম রাজার কুল, শিকল ঘাট,দারিয়ারদীঘি‌,বড় ঢেবা’চিতাখালি,বাইন্নার দোকান মতি ব্রিজ,মীরজা আলির দোকান, পশ্চিম মির্জা আলির দোকান সহ এসব এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি অবৈধ স’মিল। কয়েকজন গ্রামবাসীর ভাষ্য মতে, ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।বনবিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থাপিত স’মিলে চোরাই গাছ চিরাই ও পাচারের ডিপুতে পরিণত হয়েছে এগুলো। এসব চিরাইকরা কাঠ ডাম্পার ও জীপ যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করা হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রামু উপজেলার রাজার কুলও, ফতেখাঁরকুলে অবৈধ অর্ধ শতাধিক স’মিল বসানো হয়েছে। এসব স’মিলে গিলে খাচ্ছে পাহাড়ের হাজার হাজার মূল্যবান গাছ। এবং মাসে লাখ লাখ টাকা যাচ্ছে ডিএফও’র পকেটে। এসব টাকা বিট অফিসার ও রেঞ্জ অফিসারের মাধ্যমে যায় ডিএফও’র হাতে।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ সব স’মিলের বৈধ কাগজপত্র কিংবা কোন প্রকার লাইসেন্স নেই। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এসব স’মিল বসানো হয়েছে এবং চলে আসছে।

তবে জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন রামু উপজেলা বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার রেঞ্জ, বিট অফিসার ও বনকর্মী প্রতিটি স’মিল থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করে থাকেন। এদিকে সামাজিক বনায়ন রক্ষায় স্থানীয় নাগরিক সমাজ অবৈধ সমিল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বারবার রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তারদের নিকট শরণাপন্ন হলেও তিনি কোন উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে দু’একজন রেঞ্জ কর্মকর্তা, বন বিভাগের কর্মচারীদের সাথে মাসিক চুক্তি থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে, তবে কক্সবাজার সদরে আরও কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে স,মিল উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা বন বিভাগে লোকবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বলেন অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমন্বয় না থাকার ফলে অভিযান করা সম্ভব হয় না।

রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, এই অভিযোগে জানা গেল,রাজারকুল রেঞ্জের অধীনে অর্ধ শতাধিক অবৈধ করাত কল রয়েছে। এবং অবৈধ ড্রেজার মেশিন ২০ টি উপরে রয়েছে।প্রতিটি করাত কল থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল কে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।এবং অবৈধ ড্রেজার মেশিন বালু উত্তোলনের পয়েন্ট থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি রাজারকুল রেঞ্জে ৪ টি বিট রয়েছে এই বিটে অনেক হেক্টর জায়গা রয়েছে। কিন্তু রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তার নাজমুলের কারণে প্রায় ৪০% জায়গা পাবলিকের জবরদখলে চলে গেছে। কারণ ওখানে ঘর করতে গেলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয় । টাকা না দিতে পারলে ওই ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে জায়গা উদ্ধার করা হয় বলে নাটক করা হয়। আরো অভিযোগ রয়েছে অবৈধ যারা কাঠ ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের কাছ থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা করে মাসোহারা নেয়। একই সাথে এক সপ্তাহে বালি উত্তোলন সহ অবৈধ ডাম্পার বনভূমি পাহাড় কেটে অবৈধ বালির ডাম্পার আটকে রেখে তারা।পরে বাণিজ্য শুরু করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, সাম্প্রতিক সরকারি বালি উত্তোলনের খালের ডাক থাকা ও সরকারকে রাজস্ব দেওয়া একটি পয়েন্ট থেকে তিনটি গাড়ি জব্দ করে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে গাড়িটি ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে ,তিনটি গাড়ি তার হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে দুটি ডাম্পার গাড়ির ব্যাটারি চুরি হয়। এই ব্যাটারির দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা মত ।
এবং ওই এলাকায় একজন বর্তমান মেম্বার দাড়িয়ার দিঘী খেদার গোনা আলমগীর মেম্বার এর দখলীয় পিএপ জায়গা ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বিক্রি হয়েছে দারিয়ারদিঘী বিট কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের মাধ্যমে ।সেখান থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল নিয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরো অভিযোগ রয়েছে ,পাঞ্জেগানা সোনাইছড়ি রোডে সিরাজুল ইসলাম নামক ব্যক্তির দখলীয় পিএফ জায়গা ১৯ লক্ষ টাকা দিয়ে বিক্রি হয়েছে, সেখান থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল নিয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। থোয়াইংগাকাটা ফজল আম্বিয়া স্কুল সংলগ্ন সিরাজুল ইসলাম এর দখলিয় সরকারি পিএফ জায়গা থেকে প্রায় ৫০০ পিস আকাশমনি সেগুন, গামারি, মেহেরঘুনি ,গামারী সহ অন্যান্য জাতি প্রজাতির গাছ বিক্রি করেছে ১১ লক্ষ টাকা সেখান থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল নিয়েছে তিন লক্ষ টাকা।এত অভিযোগ থাকার পরেও সেই এখনো বহাল তবিয়ে রয়েছে ওই আলোচিত রেঞ্জ কর্মকর্তা। তবে এলাকাবাসীর দাবি ঊর্ধ্বত কর্তৃপক্ষের আমলে যেন তার বিষয়টি নেওয়া হয়। এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ওই এলাকার সচেতন মহল।

এই বিষয় নিয়ে রাজাকুল রেঞ্জ এর অধীনে অবৈধ করাত কল বালি উত্তোলন ও পাহাড় কাটার বিষয় নিয়ে খুনিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হক কোম্পানির কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজাকুর রেঞ্জের অবৈধ কার্যক্রমের বিষয় নিয়ে অবগত রয়েছে, একই সাথে তিনি উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয় নিয়ে উত্থাপন করেছিলেন,ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি অবগত করেছেন,যেন তার ইউনিয়নে এসব অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ হয়।

এ বিষয় নিয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, স’মিল উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। তবে আমরা এদের বিষয় নিয়ে দেখব যদি সঠিক হয় আমরা অভিযান পরিচালনা করব।

এই বিষয় নিয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ফাহমিদা মুস্তাফার কাছ থেকে জানতে চাইলে, তিনি বলেন অবৈধ করাত কল ও অবৈধ ড্রেজার মেশিন এর বিষয় নিয়ে আপনাদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি ,তবে বিষয়টি আপনার মাধ্যমে আমলে নিয়েছি ,পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: