কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার-টেকনাফ আরকান (শহীদ এটিএম জাফর) সড়কে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকার কারনে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত ২মাসে প্রায় ২০ জনের অধিক পথচারী নিহত ও ২শতাধিক যাত্রী আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এছাড়াও বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে উখিয়া-টেকনাফের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসাগামী ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে অভিভাবক মহল। পথচারী পারাপারে মারাত্মক সংকটের সৃষ্টি হওয়ায় জন দুর্ভোগ বেড়েছে। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে যানজটে নাকাল সাধারণ মানুষের মৃত্যুঝকি এড়াতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি ৪ লেইনে উন্নিত করার দাবী জানানো হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। সড়কের বিভিনাংশে ফাটল ধরার কারনে দুর্ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভারী যান চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল। বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার জাতিগত নিধনযঞ্জের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া ৭লক্ষাধিক সহ ১১লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত এনজিও গুলোর ব্যবহৃত গাড়ী সংখ্যা বেড়েছে আশংখাজনক ভাবে।
এছাড়ও যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টমটম, ভটভটি, ডাম্পার, চাঁদের গাড়ী, অটোরিক্সা, ব্যাটারী চালিত রিক্সাসহ ৫ হাজারেরো অধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এ সড়কে দিনরাত চলাচল করছে। যে কারনে দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে মারাত্মক ভাবে। গত ২ মাসে এ সড়কে ২০জনের অধিক পথচারী দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে সড়কের জাদিমুরা এলাকায় ডাম্পারের ধাক্কায় সিএনজি উল্টে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল হক বিএন, জেলা বিএনপির সদস্য সিরাজুল হক ডালিম নিহত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। কিছু দিন যেতে না যেতে আবারো গত সোমবার ভারী বর্ষনের সময় প্রায় ২৫ টন ওজনের বাঁশ বোঝাই একটি ট্রাক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বালুখালী কাষ্টমস এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা যান বাহনকে সাইড দিতে গিয়ে খাদে পড়ে উল্টে যায়। এসময় সড়কে চলাচলরত টমটম সিএনজি ও মাহিন্দ্রাসহ ৭টি ছোট যান বাহন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে শিশুসহ ৪ জন যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যায়। এসময় আহত হয়েছে আরো ১৬ জন যাত্রী। নিহতরা হচ্ছে বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর কায়েস (২৫), একই ক্যাম্পের তসরিন (২০), তার শিশু কন্যা মোশরফা আকতার (২৭ দিন), বালুখালী পানবাজার এলাকার এনজিও কর্মী রোজিনা আকতার (২৬)।
উখিয়া মাস্টার্স কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদ বলেন, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ আরকান সড়কের মাত্রাতিরিক্ত হারে যানবাহন সংখ্যা বেড়েছে। যানবাহনের তুলনায় সড়কের উন্নয়ন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এনজিও সংস্থার ব্যবহৃত গাড়ীর পাশাপাশি ভারী যানবাহন চলাচল করার কারনে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে। তাই এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে ভারী যান চলাচলে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। সকাল ৮ টার থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা না হলে এ দুর্ঘটনা এবং যানজট রোধ করা সম্ভব হবেনা। তিনি এসময় আরো বলেন, সড়কের যে সমস্ত খানা,খন্দক সৃষ্টি হয়ে তা মেরামত করা অত্যান্ত প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে। একই কথা অন্যান্য পেশাজীবি সচেতন মহলের। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওয়ান ওয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি এমনিতে সংকুচিত।
যেখানে ২টি গাড়ী পারাপার হয়ে ঝুকি নিতে হয়, সেখানে দৈনিক ১০হাজারের অধিক যানবাহন চলাচল করছে। সড়কপথে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আর্ম পুলিশ, ব্যাটলিয়ান পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করলেও অদক্ষ, অযোগ্য চালকের কারনে সড়ক দুর্ঘটনারোধ করা যাচ্ছেনা। সম্প্রতি উখিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশ^ শরনার্থী দিবসের আলোচনা সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ কোস্টট্রাস্টের পক্ষ থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি ৪ লেইনে উন্নিত করে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি ৪লেইনে উন্নিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেও এর আগে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ও এলজিইডি সড়কটি হাল্কা যানবাহন চলাচলের জন্য বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: