নিউজ ডেস্ক :: জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা আর সে কারণে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু বরফপুঞ্জ গলছে। আর সেই সাথে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির আচরণ ক্রমান্বয়ে রুক্ষ থেকে রুক্ষতর হয়ে উঠছে এতে প্রতিবছর উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতি ও সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
জলবায়ু জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে নানামুখি কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন তারই অংশ হিসেবে আগামী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়ন ও উপকূল সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়ে সরকার ডেলটা প্লান প্রণয়ন করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বৈশিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ছাড়াও প্রাকৃতিক কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলা হয়। এ কারণে জলবায়ু পরিবতর্নের ঝুঁকি মোকাবেলায় ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা ২০০৯(বিসিসিএসএপি-২০০৯) চুড়ান্ত করা হয়। যা উন্নয়শীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এই ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে তা বাস্তবায়নে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড(সিসিটিএফ) গঠন করা হয়।
মূলত তারই আলোকে বঙ্গোপসাগর উপকূল কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে জেলার মীরেশ্বরাই এবং ফেনীর রেগুলেটর থেকে নোয়াখালীর রহমতখালী রেগুলেটর ও পুরো হাতিয়াসহ ৬৪২ কিলোমিটার উপকূল সুরক্ষায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটার উঁচু করে সুপার ডাইক নিমার্ণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার আর এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ১৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এরমধ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের মীরেশ্বরাই পর্যন্ত ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নিমার্ণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৬ কোট ৮৩ লাখ টাকা এবং নোয়াখালীর রহমতখালী রেগুলেটর থেকে ফেনী রেগুলেটর পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার ও পুরো হাতিয়া উপকূলের ৮৬ কিলোমিটারসহ ২১২ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।
সুপার ডাই বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও লক্ষীপুর-নোয়াখালী-ফেনীর উপকূলীয় এলাকার সার্বিক মান উন্নয়নে সমুদ্র উপকূল প্রতিরক্ষাসহ সুপার ডাইক নির্মাণ শীর্ষক দুইটি পৃথক প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের লক্ষ্যে পানি উনন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (নকশা) কে প্রধান করে দুইটি পৃথক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে এই পৃথক কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে। অপরদিকে চলতি মাসের শেষের দিকে গৃহীত প্রকল্প দু’টির ডিপিপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সুপার ডাইক নিমার্ণের উদ্যেশ্য হলো আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সবধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা। এই প্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রস্তাবিত সুপার ডাইক নিমার্ণ হবে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০ মিটার উচুঁ করে এবং সুপার ডাইকের উপর দুই লেনের (মেটোরেভল পেভমেন্ট) সড়ক এবং তীরের দুই দিকে ঢাল সুরক্ষায় নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিদের্শনার আলোকে গ্রহণকৃত ডিপিপির আলোকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের মধ্যে, ১৯১ কিলোমিটার সন্দ্বীপ, ৬৩ কিলোমিটার কুতুবদিয়ায়, ধলঘাটায় ৩৮ কিলোমিটার এবং মহেশখালীতে ৯০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নিমার্ণ করা হবে।
তাছাড়া তা বাস্তবায়নে রেগুলেটর ৩০টি, কানেকটিং ব্রীজ ৭টি (সাঙ্গু নদীতে ৬৮০ মিটার, জলকদর খালে ২৩২ মিটার, ছনুয়া খালে ১২০ মিটার, ইদগাহ খালে ১৪০ মিটার, বাকখালী খালে ২৫০ মিটার, মাতামুহুরী নদীতে ২৩০ মিটার ও বারুয়াখালী খালে নির্মিত হবে ১৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রীজ)।
অপরদিকে রহমতখালীর রেগুলেটর থেকে ফেনী রেগুলেটর পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের মধ্যে ৭০টি রেগুলেটর, ১২টি ক্লোজার, ব্রীজ একটি রয়েছে। এছাড়া পুরো হাতিয়ার ৮৬৯ কিলোমিটার সুপার ডাইক(ঢাল) নির্মাণ কাজ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নিবার্হী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির জানান, নিদের্শনার আলোকে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরীর কাজ বেশ ভাল ভাবে এগিয়ে চলছে। একই ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহির আহমেদ সুপার ডাইক নিমার্ণের জন্য ডিপিপি তৈরীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ৪৩০ মিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য ডিপিপি তৈরী শেষ পর্যায় রয়েছে বলে চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশারফ নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে নোয়াখালী ফেনী হাতিয়াসহ ৬১২ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান প্রকৌশলী(নকশা) মোতাহার হোসেন সুপার ডাইক নিমার্ণে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সরকার আগামী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়নের বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়ে ডেল্টা প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে করে আগামীতে যে কোন জলবায়ু জনিত ঝুঁকি ও দুর্যোগ মোকাবেলা ও দেশের উপকূল টেকসই সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধন্য দিয়েই সুপার ডাইক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি প্রকল্প দুইটির ডিপিপি তৈরীর কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে বলেও দৈনিক নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন।
পাঠকের মতামত: