শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজার শহর থেকে খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী যাতায়াতের সড়ক নির্মাণ কাজে নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার সহ ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর শুরু করা হয়। ধীরগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ । গত এক বছরেও নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘায়িত হওয়ায় জনগুরুত্বপূর্ণ মেঘা প্রকল্পের এই অংশটির সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী-ঈদগাঁও পর্যন্ত এবং তেতৈয়া-চৌফলদন্ডী ব্রীজের এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ভবিষ্যতে কক্সবাজার সদর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা মাইলপলকের উদ্দেশ্যে গত বছর ৪ ডিসেম্বর এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন বর্তমান সরকার। খুরুশকুল-তেতৈয়া-চৌফলদন্ডী মৌজা থেকে সরকার কর্তৃক ১.৬০৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
সূত্রে আরো জানা যায়, সড়কটি ২ পার্শ্বে ৪ ফুট করে আট ফুট প্রসস্থকরনসহ সংস্কারের কাজটি ২টি ভাগে ভাগ করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে (দরপত্র নং-৩০৪-৯৫, ১০/১০/২০১৫ইং ) কক্সবাজারের ঠিকাদারী প্রতিষ্টান উদয়ন ও চট্টগ্রামের আবদুল হাকিম জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজটি পান। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনে সড়ক উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশে সিলকোট পাথর দেওয়ার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না নিয়ম। অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোলার করার কথাও মানছে না। ঠিকাদার ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে চলছে এই অনিয়ম।
কক্সবাজার জেলা কৃষকলীগ সহ-সভাপতি ও খুরুস্কুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা রফিক বলেন, সড়কটি যে পরিমাণ প্রসস্থ করার কথা ছিলো সিডিউল মতে সে পরিমাণ প্রশস্থ করা হচ্ছেনা। খোয়ার সাথে বালি মেশানোর নিয়ম থাকলেও এখন বালির সাথে খোয়া মেশানো হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সড়কটির নিমার্ণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি করে সরকারী কোটি কোটি টাকা অপচয়ের বিষয়ে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় এবং স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা এসব দুই নাম্বারী কাজ বেশ কয়েকবার বন্ধও করে দিয়ে ছিল ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মেসার্স উদয়ন কনষ্ট্রাকশনের সাব ঠিকাদার বজল আহমম্মদ কোম্পানী সড়ক নির্মানে অতি নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কটি অস্থায়ী ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই পাথরের পরিবর্তে ওয়েষ্টেস্ট খোয়া দিয়ে করলে কোন সমস্যা নেই।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া বলেন, এখানে কোন দুর্নীতি হচ্ছে না। কাজ যদি নিম্নমানের হয় তাহলে উচ্চ মানের করার জন্য কোথায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে তা স্থানীয় লোকজনকে দেখিয়ে দিতে বলুন।
সচেতন মহলের অভিমত, দীর্ঘ একবছর পূর্ণ হলেও এখনো সমাপ্ত হয়নি এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। সদরের ঈদগাঁওয়ের সাথে জেলা শহরের দুরত্ব কমে যাওয়া, কৃষি পণ্যের সহজ বাজারজাতকরণ এবং আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়কটির নির্মাণ করলেও দীর্ঘায়িত হওয়ায় জনগুরুত্বপূর্ণ মেঘা প্রকল্পের এই অংশটির সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। ‘বহু আকাংখিত যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সুষ্টু কাজের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে সদর উপজেলার খুরুশকুলের প্রায় ৬৭ হাজার, পিএম খালীর ৩২ হাজার, ভারুয়াখালীর ৩০ হাজার, চৌফলদন্ডীর ৪৩ হাজার, পোকখালী ২২ হাজার, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৩৯ হাজার সহ প্রায় আড়াই লাখ মানুষ উপকৃত হবেন।
স্থানীয় সরকারের উপজেলা শহর উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় এ কাজে যে অনিয়ম ও কারচুপি হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষের নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
পাঠকের মতামত: