ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

এসএসসি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় কক্সবাজারে

ssc-feনিউজ ডেস্ক :::

বোর্ডের কড়া নিদের্শ এবং উচ্চ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে এবারও কক্সবাজারের বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় এসএসসি  ও দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরনে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে। এ তালিকায় পিছিয়ে নেই গ্রামের স্কুল গুলোও। তবে এবার অতিরিক্ত ফি আদায় কে স্বীকৃতি দিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে স্কুল প্রধানরা। সব বিষয়ে পাশ করা ছাড়া বাকিদের কাছ থেকে বোর্ড খরচ বলে আদায় করেছে এসব টাকা। এছাড়া সব স্কুলে কোচিং ফি বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। একই সাথে কোচিং ফির নামে আদায় করা হচ্ছে বিপুল টাকা। এদিকে বেশির ভাগ মাদ্রাসাও আদায় করেছে অতিরিক্ত ফি। সচেতন মহলের দাবী বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বেশির ভাগ স্কুল মাদ্রাসা এখন এমপিও ভুক্ত তাহলে কেন প্রতি বছর ফরম পূরণের নামে এত টাকা বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। আর এসব টাকার সিংহ ভাগেই আত্বসাৎ করে শিক্ষক আর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কিছু প্রভাবশালী সদস্য।
কক্সবাজার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাম মোহন সেন বলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান স্বাক্ষরিত ২১ সেপ্টেম্বর প্রেরিত পত্র অনুসারে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা ফি, ব্যবহারিক, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ, মূল সনদ, বয়স্কাওট, শিক্ষা সপ্তাহ মিলে ১৪৮৫ টাকা আর ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় সব মিলিয়ে  ১৩৯৫ টাকা। সেটা সঠিক ভাবে অনুসরণ করার জন্য সব স্কুল কে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং সেই পরিপত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ আছে কোন ভাবেই যেন এই ফির বাইরে কোন ফি আদায় করা না হয়। এদিকে জানা গেছে বোর্ডের নির্দেশ না মেনে অনেক স্কুল মাদ্রাসা বাড়তি ফি আদায় করেছে।
কক্সবাজার শহরের তৈয়বিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসার ছাত্র অভিভাবক নুরুল হক বলেন, এবার আমার ছেলে দাখিল পরিক্ষার্র্র্থী কিছু দিন আগে ফরম পূরনের জন্য সম্ভবত ২০০০ টাকা দিয়েছে। এখন বলছে কোচিং ফির জন্য আরো ১০০০ টাকা লাগবে। আর আমার এক প্রতিবেশি গরীব মানুষ তার ছেলে ২ বিষয়ে নাকি খারাপ করেছে। প্রথমে বলেছে তাকে দাখিল পরীক্ষা দিতে দেওয়া যাবে না। পরে যে কোন ভাবে ম্যানেজ হওয়ার পর তার কাছ থেকে নাকি চট্টগ্রাম যাতায়ত বাবদ আরো টাকা বাড়িয়ে নিয়েছে। আমরা জানতে চাইলে তারা বলেছে এটা বোর্ডকে দিতে হবে। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মোঃ সাহাদৎ হোসেন বলেন বোর্ড নির্ধারিত ফির সাথে কিছু আনুষাঙ্গিক খরচ সহ ১৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে আর কোচিং ফি মাসে মাসে দেবে সেটা এখানে সম্পৃক্ত নয়।
কক্সবাজার সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন আমাদের কাছ থেকে এসএসসি ফরম পূরণ হিসাবে কারো কাছ থেকে ২২০০ টাকা আবার কারো কাছ থেকে ২৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এর সাথে কোচিং করতে বাধ্যতামূলক করেছে শিক্ষকরা। আসলে আমাদের স্কুলটা দেখার কেউ নেই এখানে কোন কমিঠি নেই ৭/৮ বছর তাই প্রধান শিক্ষক সব কিছু আর তিনি এখানেই থাকেন না। আর শিক্ষকদের মধ্যে সব সময় কথা কাটাকাটি হয় আসলে আমরা ছাত্র হিসাবে কিছু বলতে পারি না। তবে এটা ঠিক যে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে।
রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে সেখানে চলতি বছর এসএসসির ফরম পূরনের ১৮০০ টাকা ফি আদায় করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের কাছ থেকে আরো বেশি। এটা যারা সব বিষয়ে পাশ করেছে তাদের খেত্রে যারা কয়েক বিষয়ে খারাপ করেছে তাদের কাছ থেকে আরো বেশি ফি আদায় করা হলেও তা বাইরে না বলতে নিষেধ করেছে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী।এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিম বলেন এটা ঠিক আমাদের স্কুলে এবার ১৮০০ টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। সেটাই বোর্ড নির্ধারিত ফি, তবে কোচিং করার জন্য আদালা ভাবে টাকা নির্ধারন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে রামু উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল গর্জনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই স্কুলে সব মিলিয়ে ৩৪০০ টাকা ফি আদায় করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত ফি না দিলে অনেকের কাছ থেকে জোর করে ফি আদায় করা হয়েছে। স্থানিয় অভিবাবকদের দাবী এখানে যাদের ২ টি ছেলে মেয়ে পরীক্ষার্থী তারা অনেকে ফরম পূরনের টাকা দিতে না পেরে গরু ছাগল বিক্রি করে স্কুলের টাকা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোচিং ফি সহ ৩৪০০ টাকা নেওয়া কথা অপকটে স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।
মহেশখালী রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জালাল উদ্দিন বলেন আমাদের এখানে দাখিল পরীক্ষার জন্য ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। এটা কোন বিষয় না এখানে চট্টগ্রাম যাওয়া আসা সহ আরো অনেক খরচ আছে তাই এগুলো নিতে হয়।
একই উপজেলার কালারমারছড়া শাহ মজিদিয়া আলিম মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মৌলানা সেলিম উল্লাহ বলেন আমাদের এখানে ১৭০০ টাকা নেওয়া হযেছে সাথে কোচিং ফি সেটা অভিবাবকরা যা নির্ধারন করেছে তাই নেওয়া হচ্ছে।
মাতারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, হোয়ানক বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়, মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখানে সর্বোচ্চ ১৫০০/১৬০০ টাকা নেওয়া হলেও বাধ্যতামূলক ভাকে কোচিং করতে হচ্ছে সবাইকে। আর কোচিং ফির নামে প্রায় ১ হাজার টাকার মত আদায় করা হচ্ছে।এদিকে উখিয়া উপজেলার পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৪৯৫ এবং বিজ্ঞানে ১৬১৫ টাকা আদায় করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ স্কুলে কোচিং ফির নামে বিপুল টাকা আদায় করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
এদিকে বরাবরের মত কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০০ টাকার কাছাকাছি ফি নেওয়া হয়েছে বলে জানান এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপ- পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রসেনজিৎ পাল বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে কোন ফি নিতে পারবে না। এটা বোর্ডের কড়া নির্দেশ আছে। তাছাড়া উচ্চ আদালতের একটি রায়ও সম্ভবত আছে। এর বাইরেও কেউ সেটা না মানলে নিশ্চই ব্যবস্থা হবে।

পাঠকের মতামত: