জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যের সম্ভাব্য জোটে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করায় ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের ওপরে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে জামায়াত। এই জোট থেকে জামায়াত স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে এমন মন্তব্য কয়েকদিন থেকেই করছেন ড. এমাজউদ্দিন।
মঙ্গলবারও প্রেসক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যের যে জোট হতে যাচ্ছে সেখান থেকে জামায়াত নিজেই সরে যেতে পারে। তবে তার বক্তব্য বিকৃত করে একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ২০ দলীয় জোট থেকে দলটিকে বাদ দেওয়ার কথা প্রকাশিত হলে ভীষণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াত।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের মঙ্গলবার বিকালে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আলো ও অন্ধকারের খেলায় লিপ্ত রয়েছেন।
জামায়াতের প্রচার বিভাগের কর্মচারী এম আলম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি রাজনৈতিক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে গভীর বিস্ময়, ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে এবং তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
ডা. তাহেরকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের জাতীয় স্বকীয়তা যখন চরম হুমকির মুখে সে সময়ে ২০-দলের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করা প্রয়োজন, যখন জাতির প্রতিটি বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হারে হারে উপলব্ধি করছেন- ঠিক এ সময়ে এমাজউদ্দিন সাহেবরা কোন উদ্দেশ্যে কার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, আমরা এমাজউদ্দিন সাহেবের সম্মানের দিকে লক্ষ্য রেখে স্পষ্টভাষায় বলতে চাই যে, ২০ দলীয় জোট এমাজউদ্দিন সাহেবকে জোটের কোনও মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোনও কথা বলার অধিকার তার নেই।
জামায়াতের পাঠানো বিবৃতিতে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ড. এমাজউদ্দিন সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত ও অযাচিত আচরণ করছেন। এর জন্য অবশ্যই তাকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জনগণ ধরে নিতে বাধ্য হবে তিনি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আলো ও অন্ধকারের খেলায় লিপ্ত রয়েছেন।
আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ভবিষ্যতে এ ধরনের অযাচিত, অন্যায্য ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বান জানান।
যদিও অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের কাছে জামায়াতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত জামায়াতকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া আমি এমন কোনও মন্তব্যই করিনি। যেটা বলেছি, সেটা তো সবাই শুনেছেন।’ জামায়াতের প্রতিবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলাপ করার রুচি নেই।’
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, জামায়াতের নেতারা অধিকাংশই একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন যে জাতীয় ঐক্য হচ্ছে সেখান থেকে জামায়াত নিজেই সরে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, দেশে এখন যে অবস্থা, তাতে জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরি। জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা কেবল একটি রাজনৈতিক দল। সরকার চাইলে যে কোনও সময় ওই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
তবে এমাজউদ্দীন আহমদের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর জানান, মঙ্গলবার প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানের বক্তব্যটি বিকৃত করে প্রকাশিত হয় একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে। পরে এমাজউদ্দীন আহমদ ওই খবরটির প্রতিবাদ করলে তা সরিয়ে নেয় ওই দৈনিকটির কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৯ মিনিটে ড. এমাজউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে ওই দৈনিকের অনলাইন সংষ্করণের শিরোনামটি করা হয়েছিল ‘জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত’। কিন্তু তিনি সরাসরি এ ধরনের কোনও মন্তব্য প্রেসক্লাবের ওই অনুষ্ঠানে করেননি বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে, প্রেসক্লাবের ওই অনুষ্ঠান নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘জামায়াত নিজেই জঙ্গিবিরোধী জোট থেকে সরে যেতে পারে: এমাজউদ্দিন’। এ প্রতিবেদনটিকে সঠিক বলেছেন ড. এমাজউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ওই সহচর।
পাঠকের মতামত: