আসন্ন কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান এএইচ সালাহ উদ্দীন মাহমুদ।
এ উপলক্ষে শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তিনি নির্বাচনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেনের সাথে সাক্ষাত শেষে সালাহ উদ্দীন মাহমুদ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিজেকে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
এসময় তার সাথে ছিলেন চকরিয়া বরইতলী ইউপি সদস্য মো. নুরুল ইসলাম (বাবুল), মাস্টার আবদুল হক, ইসমাঈল হোসাইন, জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এএইচ সালাহ উদ্দীন মাহমুদ কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জেপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য।
দলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র খুব কাছের ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত।
সালাহউদ্দিন মাহমুদ চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ডেপুটি বাড়ীর বাসিন্দা। তিনি মুজিব বাহিনী নামে খ্যাত ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’-বি.এল.এফ কক্সবাজার মহকুমার কমান্ডার ছিলেন। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে বরণ্য এ রাজনীতিবিদ চকরিয়া-পেকুয়া তথা কক্সবাজার জেলাকে উন্নয়নে ঢেলে সাজিয়েছেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকালে যার কারনে জনপ্রিয়তার বিচারে এখনো তিনি জনগনের মাঝে নিজের অবস্থান অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছেন।
স্বাধীনতার পর কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা অর্থনৈতিক ও আর্তসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমানে অপার সম্ভাবনার জনপদে পরিণত হয়েছে। সম্ভাবনার জনপদ চকরিয়া-পেকুয়া অঞ্চলের সর্বজনের পরিচিত নেতা জাতীয় পার্টির আমলে নির্বাচিত এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ একজন বরণ্য রাজনীতিবিদ তেমনি সুবক্তাও। এ কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রশাসনিক দক্ষতার অর্জনের জন্য স্বাধীনতার পর তাকে সরকারীভাবে স্কলারশীপ দিয়ে বুলগেরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলার (চকরিয়া-পেকুয়া) প্রথম নির্বাচিত উপজেলা চেয়রম্যান।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের জন্ম চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ডেপুটি বাড়ির সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে। তিনি জন্ম গ্রহন করেন ১৯৫০সালের ২৫ শে নভেম্বর। তার পিতার নাম মরহুম এ.এ সুলতান মাহমুদ বি.এ, মাতার নাম আছিয়া বেগম, দাদার নাম মরহুম গোলাম কাদের এম.এ (ডবল) ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট, নানা মরহুম আলহাজ্ব ফররুখ আহমদ এম.এ বি.এল এডভোকেট।
তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম ঘাটফরহাদবেগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল, সরকারি মুসলিম হাইস্কুল, চাঁদপুর মতলবগঞ্জ জেবি হাইস্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ওইসময় নির্যাতন ও কারাভোগ করেন। ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম সরকারী বাণিজ্য কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৭ সালে যশোর জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ নেতা, ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘বাজাসান্ধো’র প্রথম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৭ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তিনি হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। এখানেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেন। ঢাবি ছাত্র থাকাকালীন কক্সবাজার মহকুমা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
১৯৭৪ সালে বুলগেরিয়া সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে সুফিয়া সোস্যাল সায়েন্স ও পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন একাডেমী থেকে প্রশাসনের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবনে সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৮৫ সালে চকরিয়া উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে উপ-মন্ত্রীর পদমর্যাদায় কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রথম জেলা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
সালাহউদ্দিন মাহমুদের আমলে অভুতপুর্ব উন্নয়ন ও প্রতিষ্টা হয়েছে চকরিয়া নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, চকরিয়া কলেজকে ডিগ্রি কলেজে উন্নীতকরণ, বাটাখালী সেতু নির্মাণ, পেকুয়া কাটাফাড়ি সেতু নির্মাণ, বাগগুজরা সালাহ উদ্দিন ব্রীজসহ বরইতলী মগনামা সড়ক, বদরখালী সড়কের উন্নয়ন, চিংড়ি জমির সঠিক বরাদ্দের মাধ্যমে চাষের উন্নয়ন, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের উন্নয়নসহ গ্রামীণ বিভিন্ন সড়ক, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণসহ প্রভূত উন্নয়নমূলক কাজ করেন।
রাজনীতির এই পুরোধা নিজ এলাকা বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ উন্নতি সাধিত হয়। তিনি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও ভবনের জমি বিদ্যালয়ের নামে রেজিষ্ট্রি করে নিতে ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলেন। একারণে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সবার কাছে স্মরণীয় ব্যক্তি।
পারিবারিক জীবনে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের এক স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী সেনোয়ারা পারভীন গৃহিনী। বড় মেয়ে শাহরীমা ইশরাত রীমা, মেঝ মেয়ে সাবরীনা ইফফাত রীভা ও ছোট মেয়ে আফরুনা রিশাত অবন্তি বিবাহিত। সাংসারিক জীবনে তারা প্রতিজনই প্রতিষ্ঠিত। একমাত্র ছেলে নাগীব আল-মাহমুদ গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে চাকরীরত।
জেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান হলেও কক্সবাজার শহরসহ দেশের কোথাও তার নামে এক টুকরো জায়গা-জমি নেই। নির্লোভ এই মানুষটি গ্রামকেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন।
জীবনের শেষ সময়ে আরেকবার জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে বসতে পারলে মানবসেবা, সমাজ সংস্কার, শিক্ষার উন্নয়ন কিভাবে করতে হয় তা দেখিয়ে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
পাঠকের মতামত: