কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপ ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকা ঘিরে সরকারের নেয়া উন্নয়ন পরিকল্পনা পরিদর্শনে ১৯ সদস্যের উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধিদল এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি ব্যবহারের জন্য রেল আউট প্ল্যান চূড়ান্ত করতে তিন দিনের জন্য সরজমিন সফরে কক্সবাজার আসেন এসব সরকারি কর্মকর্তার দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছার পর কর্মকর্তার দলটি দিনভর পরিদর্শন করেন মহেশখালী দ্বীপ। আজ শুক্রবার টেকনাফ পরিদর্শনের পর আগামীকাল শনিবার তারা ঢাকায় ফিরবেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১২টি মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন এ দলে। দলটি মহেশখালী দ্বীপে সরজমিন লেআউট প্ল্যান প্রণয়ন ছাড়াও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল সকাল থেকে মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, উত্তর নলবিলা, ঘটিভাঙ্গা এবং সোনাদিয়া দ্বীপ পরিদর্শন করেন। দ্বীপে একের পর এক বড় মাপের শিল্প কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়ায় ভূমি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে তারা কাজ করেন। এ দলটির মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে এলাকার লোকজন মনে করছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গে জানান, শুধু মহেশখালী দ্বীপেই ৪টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটা নিয়ে ১৫ হাজার ৮৭২ একর জেগে ওঠা চরের জমি নিয়েই স্থাপন করা হচ্ছে এ অর্থনৈতিক জোন। মহেশখালী দ্বীপ ছাড়াও টেকনাফের সাবরাং এবং নাফ নদীর বুকে জালিয়ার দিয়া নামক স্থানে ১ হাজার ৩০০ একর জমি নিয়ে আরো ২টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে।
মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে দেশের এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে ঘোষিত মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ টাকাও পরিশোধের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জাইকা ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
অপরদিকে মাতারবাড়ীর একই স্থানে আরো ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনযোগ্য আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সে সঙ্গে দ্বীপের হোয়ানক, হেতালিয়া, করইয়ারদিয়া, কালারমারছড়া ও পানিরছড়া নামক মৌজায় আরো ৫ হাজার ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম-দক্ষিণে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সাগর থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চর এলাকা। দ্বীপের লোকজন জেগে ওঠা চরভূমি নিয়ে বলে থাকেন- এ যেন আরেক মহেশখালী দ্বীপ। অর্থাৎ সাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে যেন আরেক মহেশখালী। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, দ্বীপের দক্ষিণে ও পশ্চিমে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে জেগে ওঠা চরভূমি নিয়েই নতুন নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, ইতোমধ্যে দ্বীপের ৯টি
মৌজায় সাগরের চরভরাটে জমির পরিমাণ শনাক্ত করা হয়েছে ২৭ হাজার ৪৫২ একর। চরভরাটে সবচেয়ে বেশি জমি শনাক্ত করা হয়েছে সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা এলাকায়। যার পরিমাণ অন্তত ১৬ হাজার একর। ইতোমধ্যে দ্বীপের জমি নিয়ে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ভূমি ব্যবহারের একটি লে-আউট প্ল্যান প্রস্তুত করার কাজও শুরু হয়েছে। এই দ্বীপেই স্থাপন করা হচ্ছে একাধিক কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প। দ্বীপে আরো স্থাপন করা হচ্ছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ডিপো ও পাইপ লাইন।
এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি ব্যবহারের জন্য লে-আউট প্ল্যান চূড়ান্ত করতেই একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার কক্সবাজার আসা।
প্রসঙ্গত মহেশখালী দ্বীপের হোয়ানক, হেতালিয়া, করইয়ারদিয়া, কালারমারছড়া ও পানিরছড়া নামক মৌজায় আরো ৫ হাজার ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু হয়েছে। এ পরিমাণ জমিও বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করছে। বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী সময়ে এ পরিমাণ অধিগ্রহণ করা জমিতেই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেয়া হবে। এ ছাড়াও মহেশখালী দ্বীপে স্থাপন করা হবে আমদানি করা গ্যাস ও তেলের ডিপো এবং পাইপ লাইন। মহেশখালী দ্বীপ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত স্থাপন করা হবে এসব পাইপ লাইন। এসব ছাড়াও মহেশখালী চ্যানেলের পূর্ব তীরে পেকুয়ায় আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক কাজও চলছে। সে সঙ্গে পেকুয়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন ঘাঁটিও স্থাপন করা হবে।
পাঠকের মতামত: