নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রতিবছরের মতোই এবারও ফসলী জমি দখল করে নিয়েছে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের আগ্রাসন। তামাক আবাদ বন্ধে ইতোপূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উপরন্তু দিন দিন এখানে আগ্রাসন বাড়ছে তামাকের। আবার মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের সরকারি খাস জমিতেও ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে তামাকের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই তামাক চাষ বন্ধ করা যাবে না। কেননা তামাক চাষে পরিবেশ, চাষিসহ পরিবার এবং আশপাশের মানুষের শারীরিক ক্ষতি হলেও কোম্পানীগুলোর লোভ দেখানো ফাঁদে পড়ে তামাক আবাদের দিকেই ঝুঁকছে চাষিরা। এতে প্রতিবছরই বাড়ছে তামাকের পরিধি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ায় কম করে হলেও প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে এবারও চাষ হয়েছে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের। আর এসব তামাক শোধন করতে গিয়ে হাজারো চুল্লিতে জ্বলছে বনের কাঠ। এতে আরো বেশি উজাড় হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান। ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির পাশাপাশি তামাক আবাদের ভয়াবহ আগ্রাসন চলছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে জেগে উঠা খাস জমিতে। সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং উপজেলার মাতামুহুরী নদী তীরের বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ খাস জমিতে তামাক চাষ চলছে।
জানা গেছে, সরকারি হিসেবে উপজেলায় আগের চেয়ে কম পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করলেও বাস্তবে দেখা গেছে তামাক চাষের পরিধি গতবছরের চেয়ে এ বছর বেড়ে গেছে।
তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে জড়িত এনজিও সংস্থা উবিনীগ ও একলাবের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চকরিয়া উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। একই সাথে বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে কয়েক হাজার তামাক চুল্লি নির্মাণ কাজও চলছে।
প্রতিবছর তামাক চাষের পরিধি বাড়তে থাকায় উপজেলার আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে করে চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলায় চরম খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষি সচেতন মহল।
জানতে চাইলে তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) কক্সবাজারের এক কর্মকর্তা চকরিয়া নিউজকে বলেন, এ বছর চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নে প্রায় আট হাজার একর জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলছে। তন্মধ্যে সংরক্ষিত বনের কিছু অংশ এবং মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমি মিলিয়ে আরো এক হাজার একর জমিতে তামাকের আবাদ শুরু হয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাষিদেরকে প্রলোভনে ফেলে দীর্ঘদিন ধরে এখানে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। এমনকি বিনাসুদে ঋণ দেওয়া ছাড়াও তামাক ক্রয়ের সময় ভাল দাম দেওয়ার কথা বলায় প্রতিবছর পরিবেশ বিধ্বংসী এ চাষে সম্পৃক্ত করছেন চাষিদেরকে।’
তিনি আরো চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘তামাক চাষের কারণে জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। একই সাথে তামাক শোধন কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার হওয়ায় প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের মূল্যবান বৃক্ষরাজি। তামাক চাষের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলায় প্রতিবছর কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। এ কারণে রবি শস্য ও ধান চাষাবাদে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তা।
পাঠকের মতামত: