জাহাঙ্গীর আলম শামস্, কক্সবাজার ::
জলদস্যুদের পর এবার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্নসমর্পণের সুযোগ এসেছে। অন্ধকার জগত থেকে সুপথে ফেরাতে তাদের বিষয়ে প্রশাসক অনেকটা ইতিবাচক।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মারফত জানা গেছে, দেশের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণে সম্মতি জানিয়েছেন সরকারের সর্বোচ্চ মহল।
জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহের কোন একদিন আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের দিন ধার্য্য করা হতে পারে।
স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রাহীরা আগামি ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে বলে নির্ভারযোগ্য সুত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি দল আত্মসমর্পণের আগ্রহ প্রকাশ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর প্রতিবেদক এমএম আকরাম হোসেন এর কাছে। ফলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর উদ্যোগে বিষয়টি জানানো হয় সরকারের উর্ধ্বতন মহলে। এ প্রেক্ষিতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের এ প্রক্রিয়াকে সফল করতে হতে গত এক মাস ধরে মাঠে কাজ করছেন পুলিশ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বিশেষ একটি দল। ইতিমধ্যে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী পুলিশের এই বিশেষ দলের হেফাজতে চলে এসেছেন।
চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর প্রতিবেদক এমএম আকরাম হোসেন জানান, ইতিমধ্যে শীর্ষ মানের অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক স্বেচ্ছায় পুলিশের বিশেষ দলটির হেফাজতে চলে এসেছেন। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়েছে। আত্মসমর্পণে আগ্রহীরা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে হবে। এ তালিকা তৈরী হওয়ার পর আইনগত দিক বিবেচনা করে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
তিনি জানান, কিছুদিন আগে মহেশখালীতে জলদস্যূদের একটি অংশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তারা বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে।
আকরাম হোসেন জানান, কারাগারে থাকা জলদস্যূদের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে সেখানে থাকা বেশ কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী সুপথে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে। নিজের ভুলের স্বীকৃতি দেয়। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলে সরকারও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। যার পর থেকে শুরু হয় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকা মতে কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন। যাদের মধ্যে বেশিভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে। টেকনাফ থেকে সারা দেশে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে। সরকার মাদক নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে টেকনাফ কেন্দ্রিক বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের অংশ হিসেবে গত আড়াই মাসে টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরিক দ্বন্ধ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ২৩ জন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারান ১৯ জন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ নভেম্বর ‘নিরাপদে ফিরতে চায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)। সেখানে এনামুল হক এনাম নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর নিজের ফেসবুকে আগ্রহের কথা জানিয়ে লিখা স্ট্যাটাস স্থান পায়।
এর কিছুদিন পর ৮ ডিসেম্বর ‘অস্থির মাদকের রাজ্যে স্বস্তি ফেরাতে চান আকরাম হোসাইন’ শিরোনামে আরো একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশ করে সিবিএন।
ওই সংবাদ দু’টি প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ইমাম খাইর-এর সাথে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী যোগাযোগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আগ্রহের কথা জানায়। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন প্রতিবেদক।
পাঠকের মতামত: