অনলাইন ডেস্ক ::
চট্টগ্রামের ছেলে সাদমান জামান শুদ্ধ। বয়স ২৬। পেশায় চিকিৎসক। তিনি ভ্রমণ করছেন ইসরায়েল। প্রচারণা চালাচ্ছেন ইহুদিদের রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে। নিজেও গ্রহণ করেছেন ইহুদি ধর্ম। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েই তিনি যাচ্ছেন ইসরায়েলে। ঢাকা থেকে লন্ডন গিয়ে ইসরায়েলের ভিসা সংগ্রহ করে ডা. সাদমান জামান স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের। এজন্য তার মতো আরও ২২ জন বাংলাদেশি তরুণকে নিয়ে একটি কমিটিও গঠনের দাবি করেছেন তিনি।
জানা যায়, ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসতি স্থাপন আন্দোলন জিওনিজমের আন্তর্জাতিক সংস্থার অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করছেন সাদমান জামান শুদ্ধ। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাদমান জামানের দাবি, তিনি পারিবারিকভাবেই ইসরায়েলের প্রতি সহমর্মী। ইসলামের অনুসারী হলেও ইহুদি ধর্ম ও ইসরায়েল বিষয়ে জ্ঞান নিয়েছেন দাদার কাছ থেকে। দাদার অনুপ্রেরণাতেই সাদমান ইসরায়েল যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হন কিশোর বয়সেই। পরে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ থেকে যান লন্ডনে। সেখানকার কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পাবলিক হেলথের ওপর মাস্টার্স করতে যান। পরে ক্যাম্পাসেই ইহুদিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। সদস্য হন ‘জিউস সোসাইটি’র। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ধর্মান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন সাদমান। পরে ২০১৬-এর নভেম্বরে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন। লন্ডনে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে যান। বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করেন সাদমান। বরং ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্টে ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারায় গর্বের কথা জানান। লন্ডন ক্রমেই ইহুদিবিরোধী হয়ে উঠছে উল্লেখ করে মাস্টার্স শেষে ইসরায়েলে পিএইচডি করার আবেদন করেন সাদমান। ইসরায়েল থেকে লন্ডন ফেরার পর ইসরায়েল ও ইহুদিদের বিষয়ে আরও বেশি অনুরক্ত হওয়া সাদমান কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ইহুদিদের সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পদ গ্রহণ করেন। পরে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ‘ফ্রেন্ডস অব ইসরায়েল’-এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা নেন সাদমান জামান শুদ্ধ। গত নভেম্বরে পুনরায় ইসরায়েলে যান। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট লিভলিনের বাসভবনেও যান, এরপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কনফারেন্সে ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বী হয়ে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সূত্রমতে, চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেন সাদমান জামান। ২০০৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম মুহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৬-তে এমবিবিএস শেষ করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন শেষে সে বছরের আগস্ট পর্যন্ত চাকরি করেন ঢাকার বারডেমে। পরে চলে যান লন্ডনে। কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে ইউকের ল্যাঙ্কাশায়ারের ব্লাকপুল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ট্রমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন সাদমান জামান শুদ্ধ। তার পিতা-মাতা বাংলাদেশেই বসবাস করেন। সর্বশেষ ইনেট নামে ইসরায়েলের একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে সাদমান জামান বলেন, ‘আমি নিজেকে ইসরায়েল ও ইহুদিদের রাষ্ট্রদূত মনে করি।’ বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলবান্ধব মনোভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন সাদমান।
ইসরায়েলের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাদমান জানান, ‘সুন্নি মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তার চারদিকেই ছিল ইহুদিবিদ্বেষ। স্কুলের পাঠ্যবইতেই ছিল, “ইহুদিরা হচ্ছে শয়তানের প্রতিরূপ” অথবা “ইহুদিবাদীরাই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে”। ক্যামব্র্রিজের কারিকুলামে পরিচালিত আমাদের স্কুলেও ইহুদিবিদ্বেষ শেখানো হতো। কিন্তু ভাগ্য ভালো বাড়ির পরিবেশ ছিল আলাদা। পরিবারের খোলামেলা পরিবেশ তাকে ইসরায়েল সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে সাহায্য করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এনে দিয়েছে এলান ডেরশোচিদের বই “দ্য কেস ফর ইসরায়েল”।’ তার দাদা এ বইটি তার জন্য এনেছিলেন। ১২ বছর বয়সে তা পড়ার পর ইহুদিদের সম্পর্কে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয় তার। জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে মনে করা হয় ইসরায়েল শুধু ইহুদিদের দেশ। কিন্তু আমার দাদাই প্রথম ব্যক্তি যিনি বলতেন ইসরায়েলেরও টিকে থাকার অধিকার আছে।’ জামানের দাবি, ইসরায়েল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সাহায্য করলেও ইতিহাসের ওই অংশ কখনই উল্লেখ করা হয় না। ১৯৭২ সালে ইসরায়েল স্বীকৃতি দিলে তা অস্বীকার করে বাংলাদেশ। আরব দেশগুলো থেকে সাহায্য পেতেই বাংলাদেশ ওই স্বীকৃতি অস্বীকার করে দাবি করে জামান বলেন, তার দাদা বাংলাদেশ-ইসরায়েল সম্পর্ক তৈরিতেও দরকষাকষি করেছেন। জামান বলেন, ‘মৃত্যুর আগে দাদা বলেছিলেন, ইসরায়েল হবে প্রথম দেশ যেখানে আমি যাব। তিনি তার জুতা আর ঘড়ি আমাকে দিয়ে গেছেন। আর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে এসে আমি তার দেওয়া সেই জুতা আর ঘড়ি পরেছি। যাতে আমি অনুভব করতে পারি তিনি আমার সঙ্গে ইসরায়েলেই আছেন।’ সাক্ষাৎকারে জামান উল্লেখ করেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়নি। তবে জামান এ কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। আরও ২২ সমমনা বাংলাদেশি মিলে একটি কমিটি তৈরির চেষ্টা করছেন যারা বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখবেন। এসব কারণে জামান হত্যার হুমকি পেয়েছেন। কিন্তু পারিবারিক যোগাযোগের কারণে রক্ষা পেয়েছেন। পরে নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে তার বাবা-মা তাকে যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। এর পরই তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান আর সেখান থেকে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে আসেন। তার দাদা কিছু দিন আগে মারা গেছেন।
পাঠকের মতামত: