ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

ইরানকে মোকাবিলায় ১ লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

অনলাইন ডেস্ক ::
গত সপ্তাহে শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে একটি সামরিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান। ওই পরিকল্পনার আওতায় মার্কিন বাহিনীর ওপর ইরানের হুমকি মোকাবিলা ও তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন কার্যক্রমে গতি আনা ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যে এক লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এই খবর জানিয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা দলের সাথে ওই বৈঠকের কথা সিএনএনকে নিশ্চিত করা হলেও সুনির্দিষ্ট সেনা সংখ্যা জানাননি ওই কর্মকর্তা।

গত সপ্তাহে সিরিয়া, ইরাক এবং সমুদ্রে মার্কিন বাহিনীকে ইরান লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে বলে ওয়াশিংটন ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্দিষ্ট’ গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার দাবি করে। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এই গোয়েন্দা তথ্যের পরই মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানোর নিয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের নির্দেশে সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ইরানে স্থল আগ্রাসনের পরিকল্পনা রাখা হয়নি, কারণ তার জন্য আরও বেশি মার্কিন সেনার দরকার পড়বে। সংবাদমাধ্যমটির খবর অনুযায়ী জন বোল্টন ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এর চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড, সিআইএ পরিচালক জিনা হাসপাল এবং ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এর পরিচালক ড্যান কোটস।

প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস এর খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পকে সেনা সদস্যের সংখ্যাসহ এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, যে পরিমাণ সেনা পাঠানোর কথা বলা হয়েছে তাতে বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই চমকে যান। বৈঠকে বলা হয় ২০০৩ সালে ইরাক আগ্রাসনের সময় প্রায় একই পরিমাণ সেনা পাঠানো হয়েছিল।

সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা দেখেই বোঝা যায় ইরানের কাছ থেকে কী মারাত্মক হুমকি পাওয়া গেছে। তবে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস রাখেন এমন কর্মকর্তারা পত্রিকাটিকে বলেছেন, সেনা সংখ্যা পাঠানোর পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন আগ্রাসনের বিষয়ে ইরানকে সতর্কতা পাঠানো হচ্ছে।

প্রশাসনের আরেক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইরান যদি ২০১৫ সালের মার্কিন পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যায় তাহলে হোয়াইট হাউস নিষেধাজ্ঞার বাইরে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে ৬ জাতিগোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভিয়েনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্র (পি-ফাইভ) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি (ওয়ান) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো এ সমঝোতা বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান।

49

পাঠকের মতামত: