ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইট ভাটায় অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পাহাড়ের মাটি ও বনের কাঠ

e0f7ac0029186b388db96945c0da0487 নাইক্ষ্যংছড়ি  প্রতিনিধি ::::     বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের গহীন অরণ্য ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা ও পার্শ্ববর্তী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড রইগার ঝিরি সাপের ঘাটা এবং মিয়ানমার সিমান্ত লাগোয়া ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু মগ পাড়া ও চাইল্যাতলী নামক স্থানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ছয়টি ইট ভাটা। গহীনবনের পাহাড়ি মাটি দিয়েই তৈরি হচ্ছে এসব ইট। জ্বালানি হিসেবে যোগান দেওয়া হচ্ছে সংর িত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছগাছালি। বিগত আট বছর ধরে ঐ ইট ভাটার আশেপাশে নির্বিচারে বনজঙ্গল ও বনের কচিকাঁচা গাছ,পাহাড় কর্তন সহ নানাবিধ তান্ডবে প্রাকৃতিক বনভূমি ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত হলেও দেখার কেউ নেই। ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত স্কুল পড়ুয়া শিশু ও এলাকাবাসী।

প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরও বহাল তবিয়তে চলছে অবৈধ ইট ভাটা । গ্রামবাসী ও স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিযোগ অবৈধ ইট ভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। তাদের অভিযোগ প্রশাসন ও মিডিয়াকে ম্যানেজ করে এ সব অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী।

সরজমিনে বাইশারী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা ঘুরে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ৪০ কি.মি উত্তরে ফাঁসিয়াখালী সীমান্ত সংলগ্ন ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা ও পার্শ্ববর্তী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড সাপের ঘাটা এলাকায় দুইটি অবৈধ ইট ভাটা এবং উপজেলা সদর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দক্ষিণ সীমান্ত লাগোয়া ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু মগ পাড়া ও চাইল্যাতলীতে চারটি অবৈধ ইট ভাটা এ ধরনের অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ সব টিনের চিমনি দিয়েই তৈরী।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা পাহাড় কেটে ইট তৈরী ও মাটি মজুদ করছে। আরো কিছুদূর পূর্ব উত্তরে গিয়ে দেখা যায়, বনাঞ্চলের শত শত মন লাকড়ি মজুদ করা হয়েছে। ইট ভাটায় কর্মরত দুই শ্রমিকের নিকট জানতে চাইলে কি দিয়ে ইট পুড়ানো হয়? তারা অকপটে স্বীকার করে বলেন, লাকড়ি ছাড়া আর কি দিয়ে ইট পুড়ানো হবে। কয়লার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এখানে এত লাকড়ি মজুদ রয়েছে কয়লার কোন প্রয়োজন হয় না।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সর্দার সরিফুল ইসলাম জানান, সংশোধিত আইনে সংযোজিত পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংর ন এবং উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটা অর্থাৎ ঝিকঝাক কিলন, টেনেল কিলন অথবা অনুরূপ উন্নত মানের প্রযুক্তিতে ইট ভাটা স্থাপন করতে হবে। কৃষি জমি অথবা পাহাড় টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপ র অনুমোদনক্রমে ইট তৈরী করার জন্য পুকুর, খালবিল, নদ-নদী, চরাঞ্চল বা পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা যাবে না। ব্যবহার কমানোর জন্য কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ফাঁপা ইট তৈরী করতে হবে। নির্ধারিত মান মাত্রায় কয়লা ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরো বলেন উপজেলা সদর সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য বাগান, কৃষি জমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, নিষিদ্ধ এলাকা সীমা রেখা থেকে নূন্ন্যতম ১ কি.মি দূরত্বের মধ্যে ইট ভাটা করা যাবে না। পার্বত্য জেলায় পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোন স্থানে ইট ভাটা তৈরী সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে।

তিনি আরো জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৬টি ইট ভাটা রয়েছে। যার একটিও এ নীতিমালায় পড়েনা। ইট ভাটার মালিক ডুলাহাজারা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক পিয়ারো বলেন, তিনি ইট ভাটার ব্যাপারে হাই কোর্টে রিট করেছেন। একই ইটভাটার অপর মালিক শামশু উদ্দিন বলেন, ইট ভাটা তৈরীর কোন অনুমতি তার কাছে নেই।

স্থানীয়দের অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, ইট ভাটার বৈধতা তো দূরের কথা, প্রভাবশালীদের ম্যানেজের মাধ্যমে দীর্ঘকাল যাবৎ এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল।

তারা আরো বলেন, ইট ভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কথা বলার সাহস এখানকার সাধারণ মানুষের নেই।

সরজমিনে আরো দেখা যায়, ইট ভাটার মাত্র পাঁচশত গজের ভিতর রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনশত গজের ভিতর রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, ছয়শত গজের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও বৌদ্ধ বিহার। আর চতুরপার্শ্বে রয়েছে প্রাকৃতিক বনভূমি ও জনসাধারণের বসবাস। ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করেছেন। এখন ব্যবস্থার পালা।

বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানী বলেন, ১নং ওয়ার্ড এলাকায় একটি ইট ভাটা রয়েছে। তার কাগজপত্র আছে কিনা তিনি কিছুই জানেন না। তিনি আরো বলেন, এই ইট ভাটা শুধু তার আমলে নয় বিগত দিনেও ছিল এবং মৌসুম শুরশু হলে প্রতি বছর ইট ভাটার কার্যক্রম শুরু হয়।

এ বিষয়ে বনবিভাগের নাইক্ষ্যংছড়ি কর্মরত এবং সাঙ্গু রেঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম হারশুন জানান, ইটভাটর এ বিষয়টি বন বিভাগের নয়।  তারপরও তিনি খতিয়ে দেখবেন বিষয়টি নিয়ে কী করা যায়।

পাঠকের মতামত: