এম.এ আজিজ রাসেল :: বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বান এই তিন স্মৃতি বিজড়িত আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন করছে কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়। এ উপলক্ষে বৌদ্ধ বিহারগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
সোমবার (৩ আগষ্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ভীড় করেন পূজার্থীরা। বিকেলে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রীর অগ্গমেধা, বড় ক্যাং, পিটাকেট, চেন্দামেজু, জাদিরাম ও মোহাজের পাড়া বিহার ঘুরে দেখা যায়, ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নারী-পুরুষরা ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য প্রার্থনায় অংশ নেন। এসময় পূজার্থীরা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, ধর্মীয় প্রার্থনা, ভান্তেদের খাবার প্রদানসহ নানা ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেন। বিহারে সকলে একে অপরের সাথে কৌশল বিনিময় করেন। গ্রহণ করেন পবিত্র অষ্টশীল। বিহারের ধর্মীয় গুরুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমার গুরুত্ব নিয়ে বিশদ আলোকপাত করেন। পরে করোনা থেকে মুক্তি, দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা।
জেলার রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে প্রার্থনা, গুরু ভক্তি, ছোওয়াইং প্রদান (ভান্তেদের খাবার দান), প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বোধিবৃক্ষমূলে চন্দন জল প্রদান, বুদ্ধ মূর্তি স্নানসহ নানান ধর্মীয় আয়োজন।
কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রীর অগ্গমেধা বিহারে আগত পূজার্থীরা জানান, আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে তিন মাস বর্ষাবাস পালন করবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এসময় সংযম পালনের মধ্য দিয়ে ন্যায় ও সৎ পথে চলা, বুদ্ধের জীবনানুসরণ ও পরোপকারে অতিক্রম করবে প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিবার। এছাড়া বর্ষা বাস চলাকালে পরস্পরের প্রতি মন্দ কাজ পরিহার করে ভাল কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায়। এ মাসে আমাদের নিয়মিত ধর্মকাজে উৎসাহ বাড়ে।
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্সাট্রাক্টর উ থেন য়াইন বলেন, আষাঢ়ী পূর্ণিমার তাৎপর্য তথাগত বুদ্ধের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে। তাই বৌদ্ধদের কাছে পূর্ণিমা আসে জীবনে পূর্ণতা সাধনের জন্য। শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে অতি পুণ্যময় তিথি। এইদিন থেকে বৌদ্ধদের আত্মশুদ্ধি, ধ্যানসাধনা, সংযম ও বিনয় শিক্ষার ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত শুরু। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিনমাস বিশেষ করে পূর্ণিমা, অমাবশ্যা ও অষ্টমী তিথিতে বৌদ্ধরা আত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে ধ্যান-সাধনা, সংযম ও বিনয় শিক্ষার মাধ্যমে বিশুদ্ধ জীবন পালন করে। তাছাড়া হত্যা, চুরি, মিথ্যাভাষন, ব্যভিচার ও মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থেকে ব্রহ্মচর্য জীবন পালনে শিক্ষা গ্রহণ করে।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, স্মৃতি বিজড়িত শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া বর্ষাব্রত আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে সমাপ্ত হয়। দীর্ঘ তিনমাস ব্যাপী দান, শীল এবং ভাবনা নিবিড়ভাবে অনুশীলনের এক সুবর্ণ সুযোগ। বৌদ্ধরা এসময়ে লাভ করে থাকেন। সকলের উচিত এ সুযোগকে কাজে লাগানো।
পাঠকের মতামত: