মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) :: বান্দরবান বাজার ফান্ড সংস্থার অধীন প্রথম শ্রেণিভূক্ত আলীকদম বাজারে ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দ্ধিষ্ট কোন স্থান নেই। বাজার হতে উপজেলা পরিষদ সড়কের হিন্দু পাড়া-কেয়াংঝিরিতে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলানো হচ্ছিল। সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় তা বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এ অবস্থায় বাজারের ময়লা ব্যবস্থাপনায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছন বাজার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম।
তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক হিন্দু পাড়া-কেয়াংঝিরিতে ময়লা ফেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করেন স্থানীয় জনসাধারণ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাস্তার পাশে ময়লার স্তুপ থেকে প্রতিনিয়ত পুঁতিময় দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয় করছিল। এ অবস্থায় ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদের দুঃসহনীয় হয়ে উঠেছিল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহরুবা ইসলাম সম্প্রতি সেই স্থানে বাজারের ময়লা ফেলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সেখানে গাছ রোপন করে দেন।
এ অবস্থায় ‘বাজারের ময়লা ফেলার স্থান নির্ধারণ’ করার দাবীতে আলীকদম বাজারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ কায়েস উদ্দিন-সহ ১১৭ জন ব্যবসায়ী স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র বাজার ফান্ড প্রশাসক বরাবর গত ২৯ জুন দাখিল করেছেন।
এতে বলা হয়, ‘আলীকদম বাজারটি প্রথম শ্রেণির। বাজারের ময়লাগুলি এর আগে উপজেলা সড়ক সংলগ্ন ঝিরিতে ফেলা হতো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ স্থানে ময়লা ফেলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এ অবস্থায় ময়লা ফেলার কোন স্থান নেই। ফলে বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভবপর হচ্ছে না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারের রাজস্ব আয়ের ২৫% টাকা বাজারের উন্নয়নে ব্যয় হওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাজার ফান্ড প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে বাজারের উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বাজারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুইপার নেই। একজন সুইপার থাকলেও তিনি কাজে অক্ষম। তার পরিবর্তে অন্য একজন বর্গা হিসেবে বাজারের ময়লা পরিস্কার করেন। ইতোপূর্বে বাজার চৌধুরী লিখিতভাবে আরো দুইজন সুইপার নিয়োগের জন্য বাজার ফান্ড প্রশাসকের নিকট পত্র দিলেও কাজ হয়নি।
আলীকদম বাজার-উপজেলা পরিষদ সড়ক ছাড়াও বাজারে প্রবেশের আগে আইয়ুব ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের পশ্চিম পাশেও ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠছে। ইতোপূর্বে আলীকদম সেনা জোনের হস্তক্ষেপে এসব ময়লা পরিস্কার করানো হয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। পুনরায় সেখানে ময়লার স্তুপ জমে উঠছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারের গলিপথ, ড্রেন ও রাস্তা দখল করে ব্যবসায়ীরা স্টল ও প্লটের সীমানার বাইরে এসে সামিয়ানা টাঙিয়েছে। বাজারের কাঁচা বাজারের ২টি টিনসেডে অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাজার ফান্ডের প্লট, স্টল, রাস্তার চৌহদ্দি ও সীমানা লংঘন করে প্লট ও স্টল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বাজারের রাস্তার জায়গা দখলে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা ঠুঁটো জগন্নাথ।
তবে ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও বাজারের পুঞ্জিভুত সমস্যাগুলি নিরসনে সোচ্ছার রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহরুবা ইসলাম। সাপ্তাহিক হাট-বাজারে কাঁচা মাছ বিক্রেতাদের মাছ বাজারের দ্বিতীয় তলায় বেচা-বিকিতে বাধ্য করেছেন ইউএনও। এতে উপকৃত হচ্ছেন ক্রেতাসাধারণ। তাঁর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি বাজার কমিটির লোকজন ইউএনওর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বলেন, সড়কের পাশে অস্বাস্থ্যকরভাবে ময়লা ফেলতে দেয়া হবে না। ময়লা ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিবান্ধব ব্যবস্থাপনায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করতে চায়। কাঁচা মালামালের ময়লা এবং প্লাস্টিক বর্জ্যরে ময়লা আলাদাভাবে ফেলতে হবে। অন্যথায় ময়লার ভলিউম দিনের পর দিন বাড়তেই থাকবে।
ইউএনও মেহরুবা ইসলাম বলেন, বাজার ফান্ড প্রশাসন স্থান নির্ধারণ করে দিলে উপজেলা প্রশাসন কাঁচা ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক সিস্টেমের একটি মেশিন স্থাপন করবে। এতে ময়লার পরিমাণ কমে যাবে। প্লাস্টিক বর্জ্যরে ময়লাগুলির যাতে ভলিউম না বাড়ে সে জন্য বিকল্প উপায়ে তা অপসারণের ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।
পাঠকের মতামত: