ঢাকা,রোববার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

আন্দোলনের নামে সরকারী দায়িত্ব অবহেলা ও চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন করেছে ডাক্তার-নার্সরা -কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ::   একজন রোগির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ৫ দিন ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখা চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এরকম আন্দোলন নজিরবিহীন ও দুঃখজনক। এসব অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি রুহুল আমিন সিকদার এমন হুঁশিয়ারী দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকারি চাকুরি করে তুচ্ছ ইস্যুতে জেলার ২৮ লাখ জনগণকে জিম্মি করার অধিকার কারো নাই। ডাক্তার ও নার্সরা আন্দোলনের নামে পুরো হাসপাতালে অরাজগতা সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ৮ জনের মত রোগী মারা গেছে।

তিনি আরো বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে, চিকিৎসা সেবা না দিয়ে আন্দোলনকারী ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

রুহুল আমিন সিকদার বলেন, আন্দোলনের নামে কক্সবাজারবাসীর যে ক্ষতি করা হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার মতো নয়। যারা ১০-১৫ টাকায় টিকিট কিনতে পারে না, এমন অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছে। ৫ দিনের আন্দোলনে হাসপাতালে করুন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। যেসব সংবাদ অনেক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হয়েছে।

রুহুল আমিন সিকদার প্রশ্ন করেন, ডাক্তাররা কি আইনের উর্ধ্বে? তারা কি কক্সবাজারবাসীকে মানুষ মনে করে না? চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষদের কি তারা পশু মনে করে?

রুহুল আমিন সিকদার দুঃখ করে বলেন, ডাক্তাররা বেতনসহ সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও হাসপাতালের রোগীদের পেছনে সময় না দিয়ে প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সেবার নামে অনেকে মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি করছে। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অনৈতিক সুবিধা নেই নিম্নমানের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছে। অসাধু ডাক্তাররা অকারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ল্যাব থেকে অনৈতিকভাবে কমিশন নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত টাকার কারণে চিকিৎসা নিতে পারে না সাধারণ মানুষ। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালে যায় ৯০ শতাংশ রোগী। সেখানে গিয়ে যদি হয়রানির শিকার হতে হয়, তার চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।

ডাক্তারদের গলাকাটা বানিজ্য বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সরকারি চাকুরি করুন। না হলে সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট চেম্বার করুন। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। না হলেসাগর ভাসা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলে জানিয়ে দেন জনাব সিকদার।

সদর হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের আন্দোলনের কারণে ৫ দিনে সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার অসংখ্য মানুষ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বৃহস্পতিবার মারা যায় কক্সবাজার সদরের পূর্বপোকখালী বাসিন্দা ঠান্ডা মিয়ার ছেলে কবির আহমদ নামের ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তার স্বজনেরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। রবিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ৮ জন মতো রোগির মৃত্যুর সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণমাধ্যমকর্মী, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ শহিদুল্লাহ মেম্বার।

বক্তব্য রাখেন- ছাদেকুর রহমান, আবুল হোসেন, জহির আলম (কাজল), হাফেজ আহমদ জিসান, শাহ আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দু শুকুর, আব্দুল আলীম, নুরুল ইসলাম ভুট্টু, ওয়াহিদ, মোঃ জসিম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ার হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। এরপর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের উপর হামলা চালায় রোগীর স্বজনেরা। এই ঘটনার জের ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে।

পাঠকের মতামত: