ঢাকা,বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

আত্মহত্যায় নয়, আত্মবিশ্বাসে হয়

attohotta::: শহিদ রাসেল :::

জীবনের দৌঁড়-ঝাপে সবাই টিকে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার মানে টিকে থাকা নয়। জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ, মননের চাওয়া-পাওয়া উপলব্ধি, বিবেকের ক্রমবিকাশ, অস্তিত্বের দাবি রক্ষা করতে না পারলে মরনের কোনো কর্মফল নেই। আমরা প্রত্যেকে জন্মগ্রহণ করি, তবে মৃত্যুঞ্জয়ী হওয়ার ঘটনা বিরল। পারিপার্শ্বিক নানান ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মানবযন্ত্রে মনুষ্যত্বের জায়গাটি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসে, একসময় ‘নাই’ হয়ে যায় কিংবা বিকৃত মানসিকতায় পতিত হয়।

ছোটবেলার বেড়ে উঠার পরিবেশ, বিভিন্ন স্মৃতিময় বিচ্ছিন্ন ঘটনা, মানব মনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। জীবনের লক্ষ্য বদলায় প্রতি কর্মফলে। স্থিতিশীলতা অটুট রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এক কঠিনতম সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। দ্বিতীয়বার চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এভাবে আত্মহননে কোনো ধরনের কৃতিত্ব বা বাহাদুরী নেই। আছে শুধু সামাজিক অবক্ষয়, আর উত্তর না জানা প্রশ্নে তীরে জর্জরিত হয় আত্মহননকারীর স্বজন কিংবা প্রিয় মানুষগুলো।

আত্মহত্যা কখনো কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না, নিজের অস্থিত্ব বিলীন করার ক্ষমতা জোর করে আদায় করা গেলেও তা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বরং একটি আত্মহত্যা জন্ম দেয় হাজারো প্রশ্ন, নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে উদাহরনের ডায়েরীতে। আর আত্মবিশ্বাস মানুষকে দেয় প্রকৃত জীবনের স্বাদ। যার আত্মবিশ্বাসের নাটাই যত গভীরে তার জীবনের উর্ভরতা তত বেশি। যার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ন্যনতম একটি বিন্দু অবশিষ্ট থাকবে, তার পক্ষে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়।

মানুষ কেবল তখনই আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেই যখন সে আর কোনো বিকল্প পথ খুঁজে পায় না। আর জীবনের এমন বিচিত্র রঙ্গমঞ্চেও যে ব্যক্তি বেঁচে থাকার সকল অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, তার মহাকাল কতটা সংকীর্ণ ছিল তা সহজেই অনুমেয়। মানবশিশু যখন এই পৃথিবীতে আগমন করে তখনও তার হাত মুষ্টিবদ্ধ, সে জানান দেয় এখানকার পরিবেশের প্রতিটি বিভাগেই তার সমঅধিকার। আর বড় হয়ে সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার অধিকার আদায়ে সংগ্রামে লিপ্ত থাকে।

অভিমান মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন ভেড়াও পরিবারের জন্য অনিরাপদ। রাগ, হিংসা, দ্বেষ, পরাশ্রীকাতরতা এগুলো কিঞ্চিত সবার মধ্যে সময়ে অসময়ে বিরাজ করে। তবে কেউ যদি এসব লালন বা ধারণ করে তখনই বিপত্তি বা বিনাশ। জীবনে চলার পথে অনেক ‘অকারণ’ বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এগুলো সাময়িক। এড়িয়ে যাও। স্থির থাকো। আর যখনই কেউ এসব অকারণের কারণ অনুসন্ধানে বের হন। তখন তাকে হয় অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয় অন্যথায় বদ্ধ উম্মাদের মতো জীবনকাল পার করতে হয়। অকারণের ক্ষমতা অদৃশ্য। অপশক্তি যেকোনো সময় অকারণের উপর ভর করতে পারে।

গত ৭ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক কিশোরীর আত্মহননের খবর পড়েই এই লেখার শুরু। তারও দু’দিন আগে একই পত্রিকায় প্রকাশিত নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর আত্মহনন। দু’জনের বয়:সন্ধিকাল। অভিমান করে বাথরুমে গলায় উড়না পেচিয়ে আত্মহনন। এরকম প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নানা কারণ-অকারণে আত্মহত্যায় বিলীন হচ্ছে কতো না মূল্যবান জীবন। হতাশা, ভুল-বোঝাবোঝি, মানসিক অশান্তি, অজ্ঞতা সাধারণত এসকল কারণেই আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেশি।

আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিটি পরিবারকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবারের সকল সদস্যের পারস্পরিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া অমূলক বকা-ঝকা কিংবা উদ্ভট আচরণ পরিহার করতে হবে। ব্যক্তির জীবন তার সবচেয়ে মূলবান সম্পদ। জীবন থাকলে সবই হবে, আগে অথবা পরে। অকালে নিজের অজ্ঞতায় আত্মহননে নেতিবাচক মন্তব্য বৈ কিছুই মেলে না।

তাই আসুন, নিজের জীবনকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষদের সাথে সবকিছু শেয়ার করি। আপনজনদের মাঝে নিজের অস্তিত্ব বিচারে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। সকলের সাথে হাসি-খুশি একটি সুন্দর সময়ের বিকশিত প্রণয়ে জীবন উপভোগ্য। আমাদের শুভ বুদ্ধির জয় হোক।। – কবি ও সাংবাদিক।।

পাঠকের মতামত: