শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
ক্যাপ্টেন হীরাম কক্সের আবিস্কৃত কক্সবাজারের সাগর বিধৌত ‘ম্যাক্সাল’ দ্বীপ নামের বিবর্তনে বর্তমানে মহেশখালী দ্বীপ অবশেষে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে আজ বর্ণিল যাত্রা শুরু হচ্ছে। কোরিয়ার গিগা আইল্যান্ডের মতো গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজ ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পস্থলে তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করবেন। তথ্য প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে দেশের অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় অঞ্চল মহেশখালীকেই বেঁছে নিয়ে ডিজিটালদ্বীপ প্রকল্পের আওতায় উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে ডিজিটাল মাষ্টার প্ল্যান। প্রায় ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই প্রকল্প পূর্ণাঙ্গ রুপে বাস্তবায়িত হলে মহেশখালী দ্বীপের সাড়ে ৩ লাখ বাসিন্দা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সেবার আওতায় আসবে। কোরিয়ান টেলিকম (কে,টি) প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। প্রায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার এই প্রকল্পে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি কোইকা) দেবে ২৫ কোটি টাকা। বাকী অর্থায়ন করছে সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। আগামী ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইন্টানেট সংযোগ চালু করা হয়েছে। মহেশখালী উপজেলাকে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উদ্বোধনের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মহেশখালী পৌর এলাকার রাখাইন পাড়া সংলগ্ন পান বাজার মাঠে ভিডিও কনফারেন্সের ডিজিটাল মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। সকাল ১০ টায় তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানস্থলে প্রায় ৪ হাজারের অধিক দর্শক সমাগমের মাধ্যমে এ ডিজিটাল আইল্যান্ড উদ্বোধন কালে দেশী বিদেশী শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক নেতা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া উদ্বোধন পরবর্তী মহেশখালীতে বসবাসরত উপজাতীয়দের আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান উপভোগ করবেন দেশী বিদেশী রাষ্ট্রীয় অতিথিরা।
সুত্র জানান, মহেশখালী পৌরসভা এবং উপজেলার ছোটমহেশখালী ও বড়মহেশখালী ইউনিয়নের ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম জানান, প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি উপজেলার একটি পৌরসভা ও দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১৯ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার লাইন টানা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাদ্রাসা, চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক, ৪টি সরকারি দপ্তরসহ ২৫টি ভবনে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মহেশখালীর মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষ উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি সুবিধা পাবে। তাদের শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, তথ্য ও জ্ঞানে প্রবেশাধিকার বাড়বে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ‘শিক্ষামূলক কর্মসূচি’ চালু ও শিক্ষার্থীদের এমআইএস ডাটাবেইস তৈরি, কৃষকদের জন্য ই-বাণিজ্য সুবিধা, তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করা হবে।
পাঠকের মতামত: