বাস নিয়ে সমস্যা,আই আই ইউ সির শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ক্যান্সারের মত এ সমস্যা টি আই আই ইউ সিয়ান ছাত্রদের ভুগান্তি দিচ্ছে। কিন্তু কতৃপক্ষ কি নির্বাক? নাকি সীমাবদ্ধতা, নাকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্তে গাফেলতি?
অনুসন্ধান করা দেখলে রাঘববোয়ালদের বের করতে খুব বেশী কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু বের করেই বা কি লাভ। প্রতিনিয়ত আশার বাণী শুনিয়ে বছরের পর বছর ছাত্রদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে অথরিটি। প্রতি সেমিস্টারে ছাত্র ভর্তি হচ্ছে,পাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সমস্যার কোন কুল কিনারা নেই। অথচ ভার্সিটির শিক্ষার্থী প্রতি সেমিস্টারে বাড়ছে,নতুন করে সিটি ক্যাম্পাস মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হচ্ছে, ক্যাম্পাসের আয়তন বাড়ছে, কিন্তু বাস বাড়েনা কেন?
প্রতিদিন সকালে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তীর্তের কাকের মত দাঁড়িয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা, বাসে একটা সিটের আশায়, একটা সিট নিয়ে শান্তিতে লং জার্নি আর রাস্তার যানজট পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হবে। কিন্তু এসব এখন দিবা স্বপ্ন যুগ যুগ ধরে অবহেলা আর শোষণের শিকার আই আই ইউ সিয়ানদের জন্য। প্রতিনিয়ত সকাল আর বিকেলে বাস ছাড়ার সময় হলেই বাস নিয়ে শুরু হয় অথরিটি আর ছাত্রদের মধ্যে নতুন সিনেমা। অথরিটি থাকে ভিলেনের ভূমিকায়, ছাত্ররা থাকে প্রতিবাদী জনতার পার্টে, আর বাস ড্রাইভার ও তাদের স্টাপরা থাকে দর্শকের ভূমিকায়। প্রতি দিন এসব ক্যাচালে নষ্ট হয় মূল্যবান সময়,ক্লাস। আর বাড়ছে ভুগান্তি। অথচ সেমিস্টার ফি ১ টাকা বাকী থাকলে রেজিঃ ঝুলাই রাখেন তারা। নিয়মের কথা বলে,কিন্তু নিজেরাই নিয়ম মানেন না। সীমাবদ্ধতার দোহাই আর কত?? প্রতি সেমিস্টারে একটি করে নতুন বাস সংযোজন আর ভাড়া বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেই এ সমস্যা সমাধান হতে এত দিন লাগার কথা না।
দেখা গেছে বাস নিয়ে সমস্যায় গত শনিবার ৫ টার বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টায়, আজকে শনিবার ছাড়লো ৬ টায়!! প্রতিবাদ করে বাস আটকায় দিলে স্যারদের পাঠিয়ে অথরিটি ছাত্রদের ভরসা দেন ওনারা নাকি বিষয়টা নিয়ে বসবেন!! কিন্তু উনাদের এ বসাটা মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কাজের মধ্যে না। ভরসা ভরসার জায়গায় থাকে কাজের কাজ আর হয়না। পর্যাপ্ত বাস থাকার পরেও ১৯ টা বাসের জায়গায় ১৮ টা দিয়ে কাজ চালায় ফেলার জন্য প্রেসার দেয়া হয় উপর থেকে। অথচ বাস ভাড়া ২০০০ এর বদলে ১৯৯০টাকা দিলেও ছাত্ররা পরীক্ষার এডমিট পায় না।
এক ভুক্তভোগী ছাত্র জানান, “সকাল ৯.২০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত ক্লাস করার পর এইসব কাহিনী দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছি। আমি বলি এইবার ক্ষ্যামা দেন…নামে ইসলামি শব্দ দিয়ে ঐটারে অপমান কইরেননা আর।”
শনিবার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এ গেস্ট টিচাররা ক্লাস নেন বলে এ দিন বিকেলে ছাত্র থাকে বেশি। ফলে শনিবার শিক্ষার্থীদের চাপ থাকে বেশি। গত শনিবার সমস্যাটি প্রকট আকার ধারন করলে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে অথরিটি সমস্যা সমাধানের কথা দেন। কিন্তু তার ৩ দিন পর মঙ্গলবার বাস নিয়ে সিটির ২নম্বর গেইটে বহদ্দারহাট থেকে আগত বাস পর্যাপ্ত পরিমান না থাকায় সকালে বাস আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন ছাত্ররা ক্লাস মিস করে কারন ১১টায় বাস ক্যাম্পাসে পোঁছে। সেদিন ট্রান্সপোর্ট কর্মকর্তা কে অফিসে অবরোধ করে রাখলে তিনি বহদ্দারহাট লাইনে ১২টি বাস দেয়ার কথা ভিডিও স্টেটমেন্ট দেন। কিন্তু কিসের কি? বহদ্দারহাট গামী বাস থাকে ৬টা মাত্র যা মাঝে মধ্যে ৪ এ নেমে আসে। আজ শনিবার সে শনিবারের ঘটনা আবারও। ট্রান্সপোর্ট কর্মকর্তারা ছাত্রদের তোপের মুখে নিজেকে বাঁচাতে একে অন্যকে দোষারোপ শুরু করেন। ট্রান্সপোর্ট অফিসার তার উপরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জানান তিনি ১৯টা বাসের কথা বললেও উনার উপরের কর্মকর্তা ১৮টা বাস দিয়ে চালিয়ে দিতে বলেন। আবার পাল্টা অভিযোগে উক্ত কর্ম কর্তা সঠিক ছাত্র সংখ্যা র তথ্য দিতে না পারার অভিযোগ করেন অন্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেখানে কর্মকর্তা দের কাজেরই কোন সমন্বয় নেই,সেখানে কিভাবে ট্রান্সপোর্ট এর মত একটা গুরুত্তপূর্ণ সেক্টর ভাল সেবা দেবে ছাত্রদের?
সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে ভার্সিটি প্রশাসন শীঘ্রই একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক,এটাই সবার কামনা। প্রত্যাশা কিংবা আশার বানী দিয়ে ছাত্র আন্দোলন কখনো দমিয়ে রাখা সম্ভব হয় নি,হবেও না। একটি শক্তি শালী টিম রাখা হোক ট্রান্সপোর্ট অফিসে। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এ প্রতিদিন যোগাযোগ করে তারা ছাত্র সংখ্যা জেনে নেবে, একস্ট্রা বাস ভার্সিটিতে পার্কিং এ রাখা হোক, অফিসে একটি অভিযোগ বক্স রাখা হোক। ভাড়া বাসদের ড্রাইভার দের উপর যেন কড়া নির্দেশ থাকে ছাত্ররা সিগনাল দিলে যেন অবশ্যই বাস থামায়। এসব ব্যাপারগুলো সমন্বয় করা সম্ভব হলে বাস নিয়ে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ছাত্ররা।
পাঠকের মতামত: